ষোল আনাই মিছা

শুজা রশীদ

এক চমৎকার ফুরফুরে গ্রীষ্মের দিন কিভাবে একাধারে হাস্যকর এবং ভীতকর অভিজ্ঞতায় পূর্ণ হয়ে যেতে পারে কয়েকটি মুহূর্তের ব্যবধানে সেই কাহিনী না বললেই নয়। টরোন্টোতে গ্রীষ্ম স্বল্পস্থায়ী সে কথা বলার প্রয়োজন নেই। দল বেঁধে পার্কে যাওয়াটা একটা রীতি। এই একটি ব্যাপারে আমি সর্বদাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকি। এই দিনে আমরা প্রায় পাঁচ-ছয়টি পরিবার মিলে চললাম টরোন্টোর নিকটবর্তী টাউন অব কর্টিস -এ অবস্থিত ডার্লিংটন প্রভিনশিয়াল পার্কে। এই পার্কটিতে আমার পূর্বে কখনও যাওয়া হয়নি। আবার অনুভব করি কবিগুরুর সেই ‘ঘর হইতে দুই পা’ না ফেলিবার সত্যতা।

এই পার্কটিই আমার বাসস্থান থেকে সবচেয়ে কাছে, এখানেই কখনো আসা হয় নি। অথচ দুনিয়ার তাবৎ পার্ক চষে বেড়িয়েছি। পার্কে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর পেরিয়ে গেলো। বাচ্চা-কাচ্চা সাজিয়ে-গুজিয়ে খাবার-দাবার বোঁচকা-বুচকি বেঁধে, এটা-সেটা করতে করতেই সকাল কিভাবে যেন গড়িয়ে যায়। কিন্তু গ্রীষ্মের দিনগুলো এতো দীর্ঘ যে একটু বিলম্বে পৌঁছালেও আনন্দের তেমন কোন ফারাক হয় না। আটটায় অথবা আরো পরে আকাশে আলো মোছে।

ডার্লিংটন পার্কটি লেক ওন্টারিওর শরীর ঘেষে অবস্থিত। চমৎকার বালুর সৈকত, বাচ্চাদের খেলা এবং গোসল করবার জন্য মোক্ষম। অনতিদূরেই লেক ওন্টারিওর উত্তাল জলরাশি থেকে রক্ষিত ম্যাকলাফলিন বে অবস্থিত। প্রশস্ত বালিয়াড়ি দুই জলের রাশিকে পৃথক করে রেখেছে, মাঝে একটি সংকীর্ণ যোগসাজশ আছে। ফলে ম্যাকলাফলিন বে-র পানি তুলনামলূকভাবে স্থির, ঢেউয়ের এবং স্রোতের অত্যাচার অনেক কম। এখানেই দাড় বাওয়া নৌকা চালানো যায়। পার্কে ঢুকেই লক্ষ্য করেছি বে-র পাশেই একটি নৌকা ভাড়া দেবার ষ্টল রয়েছে। ষ্টলের পাশেই থরে থরে সাজানো কাঠের ডিঙ্গির মতো দেখতে নৌকাগুলো। বেশ কয়েকটি পানিতেও ভাসছে। কিছু দেখলাম পদচালিতও রয়েছে তার মধ্যে। যারা এগুলো দেখেননি তাদের অবগতির জন্য। এই চৌকা আকারের ভাসমান নৌকাগুলোয় সাইকেলের মতো প্যাডেল আছে। বসে সেই প্যাডেলে চাপ দিলেই একটা প্রপেলার ঘোরে। নৌকা এগুতে থাকে। এটার জনপ্রিয়তা কম। সবাই ডিঙ্গি নৌকাই পছন্দ করে। এগুলোর সাথে দেশী স্টাইলের দাড় আছে। স্থির পানিতে চালানো খুবই সহজ। আমার এই ব্যাপারে বিশেষ রকমের আগ্রহ আছে।

আমি যেখানে যাই একটি ওহভষধঃধনষব প্লাষ্টিকের নৌকা সঙ্গী করে নেই। সাথে আছে মটর চালিত পাম্প। পাঁচ মিনিটেই দিব্যি তিনজনের বসার উপযোগী নৌকা তৈরি হয়ে যায়। অস্বীকার করবার উপায় নেই ডিঙ্গি নৌকার সাথে তুলনায় এই বস্তু তুচ্ছ কিন্তু কাজ চলে যায়। নিদেনপক্ষে ঘন্টায় দশ-বারো ডলার করে তো আর ভাড়া গুনতে হয় না। পার্কে ঢোকার মুখেই বেশ কিছু টাকা দিতে হয় প্রবেশমূল্য হিসাবে। বেড়াতে আমরা সবাই চাই কিন্তু‘ আর্থিক দিকটাও খেয়াল রাখতে হয়। ট্যাক্সেই যেখানে চলে যায় অর্ধেকের বেশী।

প্লাষ্টিকের নৌকার সাথে আর যে বস্তুটি আমি গ্রীষ্মে সর্বদা সাথে নিয়ে ঘুরি সেটা হলো তাবু। আধুনিক প্রযুক্তির কৃপায় বিশাল এক তাবু ছোট্ট ব্যাগে নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ানো যায়। ছোট বাচ্চা কাচ্চা থাকলে এই বস্তুটি বিশেষ রকম কাজে দেয়। কিছু ছোটাছুটি এবং উপদ্রবের পর শিশুরা অধিকাংশই গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। তাবুর ভেতরে তাদের নিদ্রা অবধারিতভাবে নিরুপদ্রব থাকে। মাঝে মাঝে মহিলারাও সেখানে রোদ থেকে আশ্রয় খোঁজেন। অধিকাংশ বাংলাদেশী মহিলারাই সর্ব শরীর আবৃত করে সৈকতে গিয়ে থাকেন। চতুর্দিকে ছড়িয়ে থাকা স্বল্প বস্ত্রের বিদেশী নারীদের পাশে তাদেরকে দেখায় খৃষ্টান ধর্মের নানদের মতো। পানিতে পা ডোবানো ছাড়া আর কোন কর্মতৎপরতা দেখানোর চেষ্টা তারা করেনও না, করানো যায়ও না। সুযোগ পেলেই তারা তাবুর ভেতরের শীতলতায় গোপনে দিবানিদ্রা দেবার অপচেষ্টা করে থাকেন।

শিলিকেই আমি বেশ কয়েকবার হাতে নাতে ধরেছি। এদেশী মেয়েগুলি নিশ্চয় অন্তরঙ্গ পরিবেশে দক্ষিণপূর্ব এশীয় মেয়েগুলিকে নিয়ে একশ একটি ঠাট্টা মশকরা করে থাকে। তাদের সুইমিং কষ্টিউমের ক্ষুদ্রতার পাশে জিনস এবং ফুলশার্ট পরিহিতা এই দেশী রমনীগুলিকে আমার কাছেই হাস্যকর মনে হয়। আর কিছু না হোক একটা হাত কাটা টি শার্ট পরলে তো আর মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। এই গরমে বস্তা পরে ঘেমে নেয়ে যাবার কোন যৌক্তিকতা দেখিনা। কিন্তু নিজ ঘরনীকেই বোঝাতে পারি না, অন্যদের কথা কি বলবো।

আমাদের সাথে এসেছেন লিটন মামা এবং এলিস ভাই। তারা দু’জনাই প্রায় আমার বয়েসী, ভায়রা ভাই এবং দু’জনরাই দুই বছরের দু’টি শিশু রয়েছে। তাবু পাততেই তারা সেটির আশে পাশে নোঙর গেড়ে ফেললেন। আমি বালুর পাশেই তাবু গেড়ে থাকি যেন বাচ্চাারা বালুতে খেলার কিছু সুযোগ পায় এবং বাবা-মায়েরা যারা একটু নিরুপদ্রব সময় কাটাতে আগ্রহী তারাও তাবুর ভেতরে বা বাইরে বসে বাচ্চাাদের দিকে নজর রাখতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বন্ধু হাসান এবং ফেরদৌসও তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে অনেক বাচ্চাা। তাদের ফুর্তি ও হৈ চৈ দেখে আমারই হৃদয় শিশুর মতো নেচে উঠলো। কোন রকমে পেটে কিছু বয়ে আনা নাস্তা চালান করে দিয়ে সবাই ছুটলাম পানিতে। উষ্ণ পানির ছোঁয়ায় মুহূর্তেই শরীর ও মন জুড়িয়ে গেলো। কিছুক্ষণ দাপাদাপি, পানি ছিটাছিটি এবং সাঁতার কাটবার ব্যর্থ প্রয়াস শেষে যখন সবাই তাবুতে প্রত্যাবর্তন করলাম তখন সবারই ক্ষুধায় নাড়ি জ্বলছে। খাবারের বহর দেখে হৃদয় দ্বিতীয়বারের মতো নেচে উঠলো। সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা নানান জাতের খাবারের রূপে ও গন্ধে স্থির থাকাই কঠিন। মাঝে মাঝে পার্কে চুলা জ্বালিয়ে রান্না করলেও আজ সেই ঝামেলায় কেউ যেতে চায় নি। আমাদের দয়ার্দ্রচিত্ত গৃহিনীরা বাসা থেকেই খাবারের এই বিপুল আয়োজন করে এনেছেন। খাদ্যে আমার কখনই অরূচি নেই। বয়েসের সাথে সাথে ক্যালরির হিসাব মাথার মধ্যে একটু যুৎসহকারে চেপে বসেছে কিন্তু এই জাতীয় অনুষ্ঠানে সেই সব হিসাব ভুলে থাকারই চেষ্টা করি। খাওয়া-দাওয়া-আড্ডা চললো কিছুক্ষণ। ইচ্ছে ছিলো একটি গড়িয়ে নেবো কিন্তু বিচ্ছুগুলোর জন্য সম্ভব হলো না। তারা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আমার ইনফ্লাটেবল (ওহভষধঃধনষব) বোটে উঠবে তাই। বোটে বাতাস ভরে বিচ্ছুগুলোর ঘাড়ে সেটাকে তুলে দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে করতে কর্তাবাবুর মতো ভীড় ঠেলে ম্যাকলাফলীন বে-র দিকে এগিয়ে গেলাম আমরা। হাসানও আমার সঙ্গি হয়েছে। তার দু’টি মেয়ে-বড়টি তাপতি, চৌদ্দতে পড়লো; ছোটটি অবিলিয়া-টরোন্টোর ক্ষুদে নৃত্যকন্যা, বয়েস চার। তাদের প্রচুর আগ্রহ। আমার দু’টি-জাকি ও ফারও দল পাকিয়েছে তাদের সাথে। ফেরদৌসের বড় মেয়ে ইভানাও রয়েছে এই দলে। সে এগারো। তার আগ্রহই সবচেয়ে বেশী।

আমাদের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব রেখে ঢিমেতালে অনুসরণ করছে শিলি, হাসানের স্ত্রী জেরিন ভাবী এবং ফেরদৌসের স্ত্রী মুন্নী ভাবী। লিটন মামা এবং এলিস ভাই জানিয়েছেন তাদের দ্বিবর্ষীয়দের কিঞ্চিৎ বিশ্রাম হলে তারাও দল বেঁধে আমাদের সাথে ম্যাকলাফলীন বে-তে যোগ দেবেন। ফেরদৌসেরও একটি এক বছর বয়েসের ছেলে আছে। সে পানি দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়। তাকে নিয়ে সৈকতে হাঁটাহাটি করছে সে। ছেলে ঠাণ্ডা হলে আমাদের সাথে বে-তে যোগ দেবে।

ম্যাকলাফলীন বে বিশাল এক দীঘির মতো। শুরূতে অপ্রশস্ত হলেও ধীরে ধীরে চওড়া হয়ে গেছে এবং এক তীর থেকে অন্য তীর কোথাও কোথাও সিকি মাইলের বেশী হবে বলেই মনে হলো। তীরের পাশ থেকে বেশ ঘন করে গজিয়ে উঠেছে গাছ-পালা। নরম বালুতে হাটতে অসুবিধা হলেও একধরণের ভিন্ন আমেজ আছে। নৌকা ভাড়া দেবার ষ্টলের সামনেই ঘাট; কিন্তু তাদের নৌকার ভীড়ে আমার বোটটাকে নামানোর জায়গা পাওয়া গেলো না। কিছুক্ষণ ব্যর্থ প্রয়াস করে বিচ্ছুগুলোকে নিয়ে তীর ধরে হেটে আরেকটু সামনে গিয়ে অগভীর কিন্তু মোটামুটিভাবে পরিস্কার পানিতে নৌকা নামিয়ে দিলাম। পানিতে স্রোত কম থাকায় তীর ঘেষে নানান ধরণের জলপ্রিয় উদ্ভিদ গজিয়ে উঠেছে। শাপলা ফুল জাতীয় বেশ কিছু জলজ লতানো গাছ বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ছোট ছোট হরেক রকমের ফুল ফুটে রয়েছে। এই সব উদ্ভি¢দের অধিকাংশরই নাম জানা নেই। সৌন্দর্যটুকুই উপভোগ করছি, পরিচয় না হয় নাইবা জানলাম।

নৌকা পানিতে নামার সাথে সাথেই যে দৃশ্যের সূচনা হলো তা সন্তানহীনের কাছে অভাবনীয় হতে পারে, আমার কাছে নয়। এমন কিছু একটির শংকা মনের কোণে আগেই জমা হয়েছিলো। নৌকার মাঝি এই শর্মা। আমি ছাড়া আর দু’জন আরোহী নেয়া যাবে। বাচ্চাাদের হয়তো দু’জনার বেশী নেয়া সম্ভব কিন্তু আমার কাছে দু’টি শিশু কিশোর উপযোগী লাইফ জ্যাকেট আছে। আমি নিজে সাতারের ‘স’ না জানায় পানিতে নামার সময় কখনো লাইফ জ্যাকেট পরতে ভুলি না। সমস্যা দেখা দিলো কে কার আগে যাবে তাই নিয়ে। কিছুক্ষণ হৈ-হট্টগোল চললো, চীৎকার-কান্নাকাটিও হয়ে গেলো, আমার মেয়েটিই এই ক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা পালন করলো বরাবরে মতই, অবশেষে জনতা শান্ত হলো। ঠিক হলো ইভানা এবং ফার যাবে প্রথমে, জাকি ও তাপতি তার পরে। অবিলিয়া এবং হাসান শেষে।

প্রথম দু’টি যাত্রা ভালোয় ভালোয় গেলো। আমার বোটে দু’টি দাড়। বোট সংলগ’ দু’টি রিঙের ভেতরে দাড় দুটিকে বসিয়ে দুই হাতে বাওয়া যায়। শান্ত পানিতে সামান্য অভিজ্ঞতাতেই নৌকাটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্রোত থাকলে ব্যাপারটা কঠিন হয়ে যেতে পারে। আমি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছি বিধায় মোটামুটিভাবে সব পরিস্থিতিই সামলাতে পারি।

বাচ্চাাগুলিকে নিয়ে তীর ধরে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে, কয়েকটি জলজ পুষ্প তুলবার সুযোগ করে দিয়ে তাদেরকে তীরে পৌঁছে দিলাম। তাপতির দাড় বাইবার বিশেষ রকম আগ্রহ থাকায় তাকে স্বল্পক্ষণের জন্য বাইতে দিলাম। অনভিজ্ঞ বিধায় নৌকা প্রথমে বিক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে নেচে বেড়ালেও সে দ্রূতই কৌশলটা ধরে ফেললো। আমার পক্ষ থেকে নুন্যতম সাহায্যেই নৌকা স্থির রেখে তীরে পৌঁছে গেলো সে। তার আনন্দ এবং উত্তেজনা দেখে ভালো লাগলো। নৌকা বাওয়ার ব্যাপারটা দেখে যত সহজ মনে হয় বাস্তবে তা নয়। পূর্বে সেই অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে যা ঘটলো তেমন পরিস্থিতিতে কখনো পড়তে হয়নি।

হাসান এবং অবিলিয়ার যাবার পালা এবার। সমস্যা দেখা দিলো মাঝি নিয়ে। আমার সাথে বড়দের লাইফ জ্যাকেট মাত্র একটি। হাসান ভালো সাতার জানলেও নিরাপত্তার কথা ভেবে আমি নৌকায় কাউকেই লাইফ জ্যাকেট ছাড়া উঠতে দেই না। তাপতি যেটি পরেছে সেটা হাসানের বপুতে লাগার সম্ভাবনা শূন্য। তাপতির হাবে ভাবে মনে হলো সে দাড় বাওয়ার ব্যাপারটা ভালোই ধরে ফেলেছে এবং অভিজ্ঞ মাঝি না হলেও তার চলবে। এমন শান্ত পানিতে কি আর সমস্যা হবে এই জাতীয় একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে আমি এই নবীন মাঝিনীর হাতে নৌকা সোপর্দ করে ডাঙ্গায় উঠে পড়লাম। অবিলিয়া সাতার না জানলেও নির্ভয়। সে এক লাফে নৌকায় উটে জাকিয়ে বসে পড়লো। বন্ধু হাসান আমার লাইফ জ্যাকেট পরে ধীরে সুস্থে নৌকায় সওয়ার হলো। সবাই সুস্থির হতে তাপতি দাড়ে গতির সঞ্চার করলো। তরী স্বাচ্ছদ্য গতিতে ম্যাকলাফলীন বে-র ঝকমকে নীল পানিতে রাজহংসের মতো সাবলীল গতিতে ভেসে গেলো। তাদের পিতা এবং পুত্রীদেরকে এই রৌদ্্েরাজ্বল প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছু চমৎকার সময় কাটানোর সুযোগ দিয়ে আমি চললাম ছিপ নিয়ে কিছু চুনোপুটি ধরা যায় কিনা সেই প্রচেষ্টায়।

মহিলাদের ছোট দলটাকে পেছনে রেখে তীর ধরে ঘন ঝোপঝাড় ভেঙে এগিয়ে গেলাম বড়শি ফেলার মতো একটা যুৎসই স্থান বের করতে। কয়েকশ গজ যাওয়ার পর কিছুটা উন্মুক্ত স্থান পাওয়া গেলো। চারদিকে প্রচুর মাঝারি আকারের গাছ-পালা, তাদের ডাল বাঁচিয়ে সাবধানে বড়শি ছুড়ি। পনেরো-বিশ মিনিটেও একটা সামান্য ঠোকরও না পেয়ে আরোও দুরে সরে গেলাম। বন্ধু তার মেয়েদেরকে নিয়ে ইতিমধ্যে তীরে ফিরে গেছে বলেই ধারণা করে নিয়েছি। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে বে-র ঐ দিকটাতে দৃষ্টি চলে না।

হঠাৎ শিলির তীক্ষè কণ্ঠস্বর কানে এলো। ভালোবাসার ডাক নয়। জরুরী তলব। ঝোঁপ ঝাড় ভেঙ্গে বেরিয়ে এলাম। সে আমার খোঁজে হাঁটতে হাঁটতে অনেকখানি পথ চলে এসেছে। তার মুখে যে সমস্যার বিবরণ পেলাম তাতে ততক্ষনাৎ খুব একটা বিচলিত বোধ করলাম না। নিজ চক্ষে পরিস্থিতি বোঝার জন্য বোট ভাড়ার ষ্টলের দিকে কিছুদূর হেঁটে এলাম। যে দৃশ্য দেখলাম সেটা বিশেষ আতংকজনক কিছু নয় বরং কিঞ্চিৎ হাস্যকর। তীর থেকে কয়েকশ ফুট দূরে নৌকায় বসে হাসান এবং তাপতি একনিষ্ট মনে দাড় বেয়ে চলেছে, শুধু সমস্যা দেখা দিয়েছে নৌকার গতিপথ নিয়ে। বিটকেল বস্তুটা নিজ অক্ষের চারদিকে লাটিমের মতো ঘুরে চলেছে, তীরমুখী এক ইঞ্চিও এগিয়ে যাবার কোন লক্ষণ তার নেই। আমি একটু অবাক কণ্ঠে বললাম, ওরা ওখানে গেলো কেন? আমি তো বলেছিলাম তীরের কাছে থাকতে।’

জেরিন ভাবী উদ্বিগ’ মুখে পানির দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তিনি ইতস্তত ভঙ্গিতে বললেন, ‘ওরা তো যেতে চায় নাই, নৌকা ভাসতে ভাসতে চলে গেলো।’

শিলি বললো, ‘ওনারা কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে তীরে আসার চেষ্টা করছেন। পারছেন না। তুমি একটা নৌকা ভাড়া করে যাও।’

নৌকা ভাড়ার ষ্টল বন্ধ হয়ে যায় ছয়টার সময়। ছয়টা বাজতে মিনিট দশেক বাকি। শিলি আমাকে তাড়া দিচ্ছে। আমি অকারণে কতগুলো টাকা গচ্চাা দিতে অনীহা বোধ করলাম। পরিস্থিতি দেখে মনে হলো না তারা এমন কোন বিপদে আছে। ছোট্ট অবিলিয়াও হাসি হাসি মুখে ঘন ঘন হাত নাড়ছে। বাবা এবং বড় বোনের তটস্থতা দেখে সে মনে হয় বেশ মজাই পাচ্ছে। কারণ দূর থেকেও তার ঝকমকে সাদা দাঁতের সারি দেখা যাচ্ছে। তার পিতৃদেব এবং জ্যেষ্ঠ ভগ্নির তটস্থতা দেখে এতো দূর থেকেও বুঝতে বিলম্ব হলো না অবিলিয়ার এই স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দে ভাগ বসানোর মতো মানসিক অবস্থা তাদের নেই। কম করে হলেও মিনিট বিশেক ধরে এলোপাথাড়ি দাড় বেয়ে দু’জনাই কম বেশী ক্লান্ত। ইতিমধ্যে পিতা-পুত্রীতে হয়তো ছোট খাটো একটা বচসাও হয়ে থাকবে কারণ কিছুক্ষণ পর পরই তাপতিকে ধমকে উঠতে দেখলাম। দূরত্বের কারণে এবং ভাষাগত ব্যবধানের কৃপায় যথার্থ সংলাপ না বুঝলেও তা যে খুব মধুময় নয় হাসানের আষাঢ়ের মেঘময় আকাশের মতো মুখ দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না। অথচ বেচারার কোন দোষ-ই নেই। তখন যদি তাপতি আগ বাড়িয়ে এমন গভীর আত্মবিশ্বাস না দেখাতো তাহলে সে কখনই এই বিশ্বস্ত এবং অভিজ্ঞ মাঝিকে না নিয়ে মাঝ দরিয়ায় নৌকা ভাসিয়ে দিতো না।

শিলি ধমকে উঠলো, ‘হা করে চেয়ে থাকলে চলবে? কিছু একটা করো।’

জেরিন ভাবীর মনে হলো চিন্তা শক্তি লোপ পাবার উপক্রম হয়েছে। তিনি উদাস কণ্ঠে বললেন, ‘আপনে ক্যামনে এই পাগলটার হাতে সোনার টুকরা মেয়ে দুটাকে তুলে দিলেন? কি হবে এখন? ওরাতো ভাসতে ভাসতে কোথায় চলে যাবে।’

বুঝলাম কিছু একটা তৎপরতা না দেখালে বিপদ এই তীরে বসে আমারও সঙ্গি হতে পারে। আমি হাঁক-ডাক দিয়ে বন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। মিনিট দুয়েক চেঁচা-মেচি করে কিভাবে দাড় বাইতে হবে সেই কৌশল শেখানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝলাম এই পন্থায় বেশী দূর অগ্রসর হওয়া যাবে না। কারণ নতুন বিদ্যা প্রয়োগ করতে গিয়ে নৌকার ঘূর্ণন না কমলেও দূরত্ব বাড়তে লাগলো।

লক্ষ্য করলাম মজা দেখতে বেশ একটা জনতার ভীড় জমে গেছে। আমার মতই অধিকাংশই পরিস্থিতির মন্দ দিকটুকু এখনও পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন না করায় অনেকের মুখেই গালভর্তি হাসি দেখা গেল, কেউ কেউ ভিডিও ক্যামেরা খুলে ভিডিও করতেও লেগে গেছে লক্ষ্য করলাম। এই দৃশ্য ইন্টারনেটে উঠে গেলে অবাক হবো না, আজকাল পরিস্থিতিই এতই সঙ্গিন হয়েছে যে কেউ হাঁচি দিলেও তা ইউ টিউবে চলে আসে এবং মুহূর্ত পেরুবার পূর্বেই কয়েক সহস্র মানুষ তা দেখে ফেলে।

নিরুপায় হয়ে নৌকা ভাড়া করতেই গেলাম। দুর্ভাগ্য আমাদের, ষ্টল সামান্য কিছু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। পার্কের কর্মচারীদের কয়েকজন তখনও সেখানে ঘোরাঘুরি করছিলো, তাদের কাছেই এবার সাহায্যের আবেদন জানাতে হলো। জানা গেলো এই জাতীয় পরিস্থিতিতে রেসকিউ টিম পাঠানোর নিয়ম। তাদের নৌকা এবং মটর রয়েছে কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যখানে। আজ গ্রীষ্মের চমৎকার দিনগুলির একটি হওয়ায় মানুষজনের এমনই ঢল নেমেছিলো যে গণশৌচাগারে পাইপ ফেটে গিয়ে চারদিক নোংরা পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। সেই ঝামেলা না মেটানো পর্যন্ত উদ্ধারকার্য স্থগিত রাখা ছাড়া উপায় নেই। পিতা-পুত্রীদের সকলের পরনেই লাইফ জ্যাকেট থাকায় এবং সকলেই সুস্থ স্বাভাবিক আছে দেখে অনতিবিলম্বে এই উদ্ধার কার্যে ঝাঁপিয়ে পড়াটা তাদের কাছে খুব জরুরী মনে হলো না।

চলে যাবার আগে জনৈক তরূণ যুবককে নৌকা পানিতে নামানোর কাজ দিয়ে পেছনে রেখে গেলো পার্ক কর্মচারীরা। তারা ফিরে এলে নৌকায় মটর জুড়ে দিয়ে রওনা দেয়া হবে। জেরিন ভাবী তিক্ত কণ্ঠে বললেন, ‘কেমন মানুষ ওরা? এই বিপদের মধ্যে দুইটা বাচ্চাাকে ফেলে ওরা চলে গেলো? আপনে কিছু করেন না ভাই।’

আমি হাসি মুখে তাকে আশ্বস্ত করতে চাইলাম। ‘বেশী চিন্তা করবেন না, কি আর হবে? বড় জোর ভাসতে ভাসতে অন্য কূলে গিয়ে ঠেকবে।’

‘তারপর?

‘আমাদের রেসকিউ বাহিনী তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসবে। আপনি খামাখা ভয় পাচ্ছেন ভাবী। চিন্তার কিছু নাই’।

তিনি বিড়বিড়িয়ে বললেন, ‘আপনার কোন কান্ডজ্ঞান নাই। এরা কেউ কি বোট চালাইতে পারে? আপনি কি করে ওদেরকে যেতে দিলেন? ছিঃ ছিঃ’!

শিলি উদার কণ্ঠে যোগ করলো, “এবার বুঝলেন তো ভাবী?”

আমি একটা বিরক্ত চাহনি দেই। সুযোগ

পেলে কেউই ছেড়ে কথা বলে না। হাসান এবং তাপতি দাড় নিয়ে তাদের সংগ্রামে কিছুক্ষণের জন্য ক্ষান্ত দিয়েছিলো। কিঞ্চিৎ বিশ্রামের পর তারা আবার নতুন উদ্যমে ‘ছলাৎ ছলাৎ’ করে নৌকার চারদিকে ঝড় তুলে দিচ্ছে। লক্ষ্য করলাম দু’জনে দিক বিদিক হয়ে দাড় বাইছে বলেই নৌকা চক্রে পড়ে যাচ্ছে। চীৎকার করে যে কোন একজনকে ক্ষান্ত দিতে বললাম। তারা ভুল বুঝলো। দাড় ওঠা নামার গতি বেড়ে গেলো।

জেরিন ভাবী ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, আপনে আর কিছু বইলেন না ভাই। আপনে কথা বললেই ওদের মাথা আরো খারাপ হইতেছে।

আমি চেপে গেলাম। লক্ষ্য করলাম হঠাৎ করেই বে-তে ধীর একটা স্রোত শুরু হয়েছে। হাসানদেরকে নিয়ে নৌকা ধীরে ধীরে বিপরীত পাশের তীর মুখী হয়ে এগিয়ে চলেছে। সেখানে পৌঁছেও অবশ্য লাভ বেশী নেই। নৌকা থেকে নামার মতো কোন যুতসই জায়গা নজর পড়লো না। ভালোর মধ্যে এই টুকুই যে পানির গভীরতা সেখানে যথেষ্ট কম হবে। বিপদের পরিমাণটা কমে যাবে। আমরা সবাই রেসকিউ টিমের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। শৌচাগারের সমস্যাটা হবার আর সময় পেলো না?

আমাদের সৌভাগ্যই বলতে হবে পার্কের কর্মীরা মিনিট দশেকের মধ্যেই ফিরে এলো। ওদিকের সমস্যা যত মারাত্মক মনে হয়েছিলো বাস্তবে তা না হওয়ায় একজনকে সেখানে রেখে দু’জন দ্রূত ফিরে এসেছে। খুব তোড় জোড় করে একটি ভারী স্পীড বোটের মটর নৌকায় তুললো তারা। ঠিকঠাক মত বসিয়ে স্টার্ট দিতে গিয়ে সবারই মুখ ব্যাজার। ইঞ্জিন স্টার্ট নিলো না। তাই নিয়ে আরেক হৈ-হল্লা শুরু হয়ে গেলো। উপস্থিত জনতার ভেতর থেকে দু’একটি তিক্ত মন্তব্য ভেসে এলো, ‘কি রে আমার রেসকিউ টিম।’

সুউচ্চ হাসির রোল উঠলো। জনৈক টিপ্পনি কাটলো, ‘রেসকিউ টিমকে রেসকিউ করার জন্য আরেকটা রেসকিউ টিম পাঠাতে হবে।’

খুব হাঃ হাঃ হোঃ হোঃ হলো।

দূরে তাকিয়ে দেখলাম তাপতি দাড় পানি থেকে তুলে ব্যাজার মুখে বসে আছে। হাসান একাই ডানে বায়ে করে কোন এক যাদুর বলে নৌকাটাকে বিপরীত তীরে নিয়ে যেতে পেরেছে। তার মুখে কৃতিত্বের হাসি দেখে মনে হয় জেরিন ভাবীর মস্তিস্কে আগুন ধরে গিয়ে থাকবে। তিনি দাঁত কটমট করে বললেন, ‘আবার হাসতাছে! লজ্জা শরম বইলা কি মানুষটার কিছু নাই। এক লক্ষ মানুষ জড় হইয়া গেছে এইখানে। মানুষ ভিডিও করতাছে। আমারে কেউ একটা দড়ি দিতে পারেন? কেমনে হাসতাছে দেখেন। ছিঃ ছিঃ!’

আমি অনেক কষ্টে হাসি দমন করি। বকুনি খাবার ভয় আমারও কম নয়। দেখা গেলো আমাদের রেসকিউ বাহিনী ঘর্মাক্ত কলেবরে ইঞ্জিনটাকে চালু করবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কোন মন্ত্রবলে কে জানে সকলের মুখের দিকে চেয়ে নিতান্ত অনীহা নিয়ে ইঞ্জিন শেষ পর্যন্ত ভট ভট করতে করতে স্টার্ট নিলো। তুমুল করতালিতে এলাকা মুখরিত হয়ে গেলো। তরূণ

উদ্ধারকর্মীরা রক্তিম হয়ে উঠলো। ধারণা করতে কষ্ট হয় না এই জাতীয় উদ্ধার কার্য হয়তো তাদের তরুণ কর্ম জীবনে এটাই প্রথম। নৌকায় উঠে কিঞ্চিৎ সমস্যায় কেউ যে পড়ে না তা নয় কিন্তু সেই সমস্যা এমন দীর্ঘায়িত হতে পারে সেটা ধারণা করা কঠিন।

আরো পাঁচ মিনিট পরে প্রোটোকল অনুযায়ী যথাযথ প্রস্ততি নিয়ে রেসকিউ টিমের যাত্রা শুরু হলো। আরেক দফা হাত তালি, হাসি, ব্যাঙ্গোক্তি। দেখা গেলো এই বিশেষ ক্ষেত্রে যারা অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন তারা হচ্ছেন বর্ষীয়সী মহিলারা।

একজন তীক্ষè কণ্ঠে বললেন, ‘দেখো, মাঝ নদীতে গিয়ে এরাই উল্টে পাল্টে পড়বে। নৌকার যে ছিরি দেখছি।

হাসির রোল ওঠে। শেষ বিকেলের মোলায়েম হাওয়ায় এমন বিচিত্র এক দৃশ্য দেখতে দেখতে জনতার মনে নিশ্চয় বিশেষ আনন্দের অনুভূতি হয়ে থাকবে। জেরিন ভাবী তাদেরকে কঠিন একটি চাহনি দিলেন। ‘খ্যাক খ্যাক করে হাসতাছে, দুইটা বাচ্চা ওখানে কোথায় ভেসে চলে যাচ্ছে আর এই উড়নচন্ডিগুলো নির্লজ্জের মতো হাসছে। ছিঃ ছিঃ!’

সব ভালো, যার শেষ ভালো। এখানেও তার ব্যতিক্রম হলো না। আমাদের তিন সদস্যের রেসকিউ টিম হাসানের সহায়তায় ভাসমান বোটের একটি আংটায় দড়ি বেঁধে তার তিন সওয়ারীসহ বোটটিকে টেনে এই তীরে এনে তুললো। তাদেরকে নিরাপদে ফিরতে দেখে জেরিনভাবীর মুখে হাসি ফুটলো। তিনি এবার ঝটপট ভিডিও ক্যামেরা বের করে ফেলে সম্পূর্ণ প্রত্যাবর্তনের চিত্রটুকু রেকর্ড করলেন। আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন ডিজিটাল ক্যামেরা, সব ছবি উঠে যাবে ভধপব নড়ড়শ-এ।

আমি এই সুযোগের সদব্যবহার করে বললাম ‘আপনি খামাখা আমাকে ঝাড়ছিলেন। দেখেন, সবাই বহাল তবিয়তে ফিরে আসছে।’

তিনি হাসিমুখে বললেন, ‘আমার বাচ্চা দুইটা ফিরা আসছে তাতেই আমি খুশী।’

আমি খোঁচা দিলাম, ‘বাচ্চার বাবাকে দেখি স্মরণই করছেন না।’

তিনি ঠোঁট বাকিয়ে বললেন, ‘ইস্ যে বেইজ্জতিটা করলো। আপনারা বন্ধুরা সব একই রকমই হইছেন।’

বুঝলাম এই লাইনে আলাপ বেশীদূর না যাওয়াই ভালো। তীরে পৌঁছে হাসান হাসিমুখে বললো, ‘আমরাতো ঠিকই ছিলাম। রেসকিউ টিমের কোন দরকারই ছিলো না।’

ভেবেছিলাম তিক্ততা আসবে জেরিন ভাবীর কাছ থেকে। বাস্তবে ঝনঝনিয়ে উঠলো তাপতি। সে বাবার দিকে অগ্নি দৃষ্টি হেনে গর্জে উঠলো, ‘এতো বয়স অইছে তোমার এখনো নৌকা চালাইতে পারো না। তোমার জীবনটা ষোল আনাই মিছা!’

জুলাই ২৭, ২০১৪