প্রয়োজনে কানাডার মায়াও ত্যাগ করতে পারেন ইমিগ্রেন্টরা
খুরশিদ আলম:
টরন্টোতে কর্মজীবী দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এদের প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনই ইমিগ্রেন্ট। ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সালে টরন্টোতে কর্মজীবী দরিদ্র মানুষের সংখ্যা শতকরা ৪২ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে এক লক্ষ তের হাজারে দাড়ায়। এই কর্মজীবী গরীবদের মধ্যে অর্ধেকই আবার সিঙ্গেল প্যারেন্টস। এদের মধ্যে অর্ধেকের বেশী লোকের রয়েছে পোস্ট সেকেন্ডারী মানের শিক্ষাগত যোগ্যতা যা কানাডার অন্যান্য কর্মজীবী লোকদের রয়েছে। এ হিসাব স্ট্যাটিসটিকস কানাডার। এই দরিদ্র জনগোষ্ঠির উপর স্ট্যাটিসটিকস কানাডার অতি সাম্প্রতিক (২০১১ সালের) জরীপ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের হিসাব থেকে এটি ধারণা করা খুবই যুক্তিযুক্ত হবে যে, গত ৬/৭ বছরে এই গরীবদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে টরন্টোর কিছু এলাকায় এই কর্মজীবী দরিদ্রদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও জিটিএ’র অন্যান্য এলাকাসহ দেশের বাকী সব অঞ্চলে লোকজনের আয়ে একটা সুন্দর স্থিতি অবস্থা বিরাজ করছে এবং এর পাশাপাশি অনেকের আয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
আরেক হিবাবে দেখা যায়, বর্তমানে টরন্টোতে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ পরিবার দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করছেন তাঁদের পৌষ্য ছেলেমেয়েদের নিয়ে। এরকম পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৯৩ হাজার। ১৯৯০ সালে টরন্টোতে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা ছিল শতকরা ১৬ ভাগ। অর্থাৎ আলোচিত এই সময়ের মধ্যে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এই হিসাব ‘ইউনাইটেড ওয়ে অব গ্রেটার টরন্টো’ নামক একটি বেসরকারী অলাভজন প্রতিষ্ঠানের।
কানাডিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভ এর অর্থনীতিবিদ আরমিন ইয়ালিনজিয়ান বলেন, আশ্চার্যের বিষয় হলো, টরন্টোতে দরিদ্র মানুষের এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এমন একটি সময়ে যখন কানাডার অর্থনীতির উন্নয়ন ১৯৬০ সালের পর এই প্রথম খুব ভাল অবস্থানে বিরাজ করছে।
শুরুতেই দেখেছি, টরন্টোর দরিদ্র এই মানুষদের সিংহভাগই ইমিগ্রেন্ট। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, সোনার হরিনের সন্ধানে নিজেদের প্রিয় জন্মভূমী ও আত্মীয়পরিজনদের পিছনে ফেলে এসে কানাডার অধিকাংশ ইমিগ্রেন্টের কেন আজ এই দূরাবস্থা? কেন তাদেরকে দিনে ১০/১২ ঘন্টা কাজ করেও ’দিন আনি দিন খাই’ অবস্থায় জীবনযাপন করতে হচ্ছে? সমস্যাটা ঠিক কোনখানে?
শুধু বাংলাদেশ থেকে আসা ইমিগ্রেন্ট নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদের অবস্থাও কমবেশী প্রায় একই রকম। কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারেন, ইমিগ্রেন্টদের আয় কম হলে বা তাঁরা দরিদ্র হলে তাতে সরকারের কি আসে যায়? ইমিগ্রেন্টরা দরিদ্র হলে তার ভোগান্তি সইতে হবে ইমিগ্রেন্টদেরকেই। তাঁদের জীবনের মান অনুন্নত হবে। তাঁদের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক চাহিদাসমূহ যথাযথভাবে পূরণ হবে না।
কিন্তু না। উপরের কথাগুলো সম্পূর্ণ ভাবে সত্য নয়। একটি দেশ ধনী হলেও সেখানে যদি উল্ল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন তবে সে দেশটির অগ্রগতি বা উন্নতি পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশটির সুনাম ক্ষুন্ন হয়। এখানে লক্ষ্যনীয় যে, কানাডায় যাঁরা দরিদ্র তাঁরা কয়েকটি বিশেষ সম্প্রাদায় বা গোষ্ঠির লোকজন। এর মধ্যে ইমিগ্রেন্ট একটি সম্প্রদায় বা গোষ্ঠি। এই ইমিগ্রেন্টরা কানাডার অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তির একটি উল্ল্লেখযোগ্য অংশ। এই পরিস্থিতিতে এদের অর্থনৈতিক অবস্থার যদি উন্নয়ন সাধিত না হয় তবে তাঁরা এক পর্যায়ে গিয়ে বাধ্য হবেন আবারো দেশ বদল করতে। একবার দেশ বদল করে নিজ জন্মভূমি থেকে কানাডায় এসেছেন। এবার স্থান পরিবর্তন করে হয় এক সিটি থেকে অন্য সিটিতে যাবেন অথবা কানাডা ছেড়ে তৃতীয় কোন দেশে চলে যাবেন।
কথায় আছে ’মরার আবার জাত কি’। ইমিগ্রেন্টদের ক্ষেত্রে বলা যায় ‘তাঁদের আবার দেশ কি’। যাঁরা নিজ মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করতে পারেন নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অথবা উন্নত জীবনযাপনের জন্য, তাঁরা প্রয়োজনে কানাডার মায়াও ত্যাগ করতে পারেন। তার প্রমানও রয়েছে কানাডায়। দেখা গেছে, এখানকার চাকরী ক্ষেত্রের বৈরী পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে এবং আয়ের উন্নতি ঘটাতে না পেরে গত দুই দশকে ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ইমিগ্রেন্টদের একতৃতীয়াংশ কানাডা ছেড়ে চলে গেছেন। অদূর ভবিষ্যতে এই ছেড়ে যাওয়ার হার আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন। এটি নিশ্চই কানাডার অর্থনীতির জন্য সুখবর নয়। কারণ আগেই উল্ল্লেখ করেছি, ইমিগ্রেন্টরা এদশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তির একটি উল্ল্লেখযোগ্য অংশ। এদেরকে অবহেলা করে, তাচ্ছিল্য করে এবং সময়ে সময়ে এদের বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্য ছুড়ে দিয়ে কানাডার অগ্রগতি কি সম্ভব? সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হতো তবে অন্য দেশ থেকে ইমিগ্রেন্ট আনার কোন প্রয়োজন পড়তো না। প্রয়োজন ছিল বলেই এবং এখনো আছে বলেই ইমিগ্রেন্ট আনা হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিকল্পনার অভাবে অথবা পরিকল্পনাহীনভাবে ইমিগ্রেন্ট নিয়ে আসার কারণে এখানে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। আর এই জটিলতাকে আরো জটিল করে তুলেছে ‘কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স’ নামক এক পর্বতপ্রমান বাঁধা। কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স নেই বলে ইমিগ্রেন্টদেরকে কোন পেশাভিত্তিক কাজে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। কেউ কেউ বলেন এই ‘কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স’ এর অপর নাম ‘কানাডিয়ান বর্ণবাদ’। এই বর্ণবাদের বাধা ডিঙ্গানো ইমিগ্রেন্টদের জন্য সহজ কাজ নয়। ইমিগ্রেন্টদেরকে এখানকার চাকরীর বাজারে করে রাখা হয়েছে অচ্ছুত ও অস্পৃশ্য। আর এ কারণেই ইমিগ্রেন্টদের আয় কম এবং এদের মধ্যে গরীবের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শুরুতেই আমরা দেখেছি টরন্টোতে বসবাসরত ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে দরিদ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৪২ ভাগ। এই গবেষণা তথ্যটি ইমিগ্রেন্টদের জন্য নিশ্চিতভাবেই একটি দুঃসংবাদ। অর্থনীতিবিদ আরমিন ইয়ালিনজিয়ান বলেন, আমাদের সমাজে বয়স্কলোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এ কারণে ইমিগ্রেন্টদের উপর আমাদেরকে আরো বেশী করে নির্ভর করতে হবে আগামী দিনগুলোতে। এখন যদি এরা বৈরী অবস্থার কারণে অন্যত্র চলে যান তবে তা হবে টরন্টোর অর্থনীতির জন্য এক বিপর্যয়কর অবস্থা।
‘ওয়ার্কারস একশন সেন্টার’ নামে এখানকার একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ডিনা ল্যাড বলেন, এ গবেষণা তথ্যটি সরকারের জন্য একটি সতর্ক বার্তা। আমরা মনে করি, ইমিগ্রেন্ট ও অন্যান্য স্বল্প আয়ের লোকদের বেতন ও তাঁদের কর্মপরিবেশ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া এই মুহুর্তে জরুরী হয়ে উঠেছে। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে আরো বলেন, আমরা কি শুধু সেবামূলক কর্মের পরিধি বাড়াবো, না কি সরকার এমন কোন কৌশল অবলম্বন করবে যাতে করে ইমিগ্রেন্টরা তাঁদের জন্য শোভনীয় কোন চাকরীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত আয় ও কর্মস্থলের বিভিন্ন বেনিফিট গ্রহনের মাধ্যমে নিজেদের পরিবারের ভরণপোষণ সুন্দর ও সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারেন এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ও করতে পারেন?
উল্ল্লেখ্য যে, টরন্টোতে টেক্স প্রদানের পর একজন কর্মজীবী মানুষের বাৎসরিক আয় ১৮,৫০০ ডলারের কম হলে তাকে দরিদ্র বলা হয়। আর স্বামী-স্ত্রীসহ চার সদস্যের একটি পরিবারের বাৎসরিক আয় ২৭,৫০০ ডলারের নিচে হলে সেই পরিবারকে দরিদ্র পরিবার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সেই হিসাবে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায় টরন্টোতে বর্তমানে প্রতি পাঁচটি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার দরিদ্র। অন্যদিকে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে দেখা যায়, প্রতি দশ পরিবারে এক পরিবার দরিদ্র।
টরন্টোতে এই কর্মজীবী দরিদ্র মানুষদের অবস্থার উন্নতির কোন লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। বরং অবস্থার অবনতিই ঘটছে দিন দিন। ২০০০ সাল থেকে টরন্টোতে চাকরীচ্যূতির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। যাঁরা ভাল বেতন পেতেন, যাঁদের চাকরীতে ছিল বিভিন্ন সুযোগসুবিধা তাঁদের অনেকেই চাকরী হারিয়েছেন। অথচ ঐ একই সময়ে কানাডার অন্যত্র চাকরীর বাজার উন্নত হয়েছে। টরন্টোতে আরো খারাপ যে ব্যাপারটি ঘটেছে তা হলো, অনেক স্থায়ী চাকরীর স্থান দখল করে নিয়েছে অস্থায়ী চাকরী, খন্ডকালীন চাকরী বা চুক্তিভিত্তিক চাকরী যেগুলোতে কোন জব সিকিউরিটি নেই, নেই কোন বেনিফিট এমনকি এমপ্লয়মেন্ট ইন্সুরেন্সও।
ফলে দেখা গেছে ২০০০ সালের পর থেকে কর্মজীবী এই দরিদ্র মানুষদের অনেকেই ঠিকমত বাড়ি ভাড়া দিতে পারেননি। আর সে কারণে বাড়ি ছাড়ার নোটিশও বৃদ্ধি পেয়েছে, ঋণে জর্জরিত হয়েছেন দরিদ্র এই মানুষগুলো, পালা দিয়ে বেড়েছে তাঁদের দেওলিয়াত্ব ঘোষণার হার। অন্য এক হিসাবে দেখা যায় ১৯৯৯ সালে টররেন্টোতে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ জারি করা হয়েছিল ১৯,৭৯৫ টি। ২০০৬ সালে এসে এই নোটিশ জারির সংখ্যা দাড়ায় ২৫,০০০টিতে।
টরন্টোতে গত কয়েক বছরে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি কর্তৃক বিভিন্ন সংস্থা থেকে পরামর্শ গ্রহনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুন। প্রতি মাসেই প্রায় সাড়ে চার হাজার লোক পরামর্শ নিচ্ছেন কি করে ঋণ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। টরন্টোর দরিদ্র মানুষেরা যে এলাকাগুলোতে বাস করেন সে সমস্ত এলাকায় ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মোট কথা, টরন্টোর কর্মজীবী দরিদ্রদের জন্য কোন সুখবর নেই। তাঁদের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। আগেই উল্ল্লেখ করেছি, কর্মজীবী এই দরিদ্রদের সিংহভাগই ইমিগ্রেন্ট। সুতরাং তাঁদের অবস্থার উন্নতি সহসা বা অদূর ভবিষ্যতে ঘটবে তেমনটি মনে করার কোন কারণ নেই। কারণ, ইমিগ্রেন্টরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই থেকেছে অবহেলিত। তথাকথিত মূলধারার কানাডিয়ানরা অর্থাৎ যাঁরা শ্বেতাঙ্গ তাঁদের অনেকেই এই ইমিগ্রেন্টদেরকে সবসময় একটা হুমকী হিসেবে মনে করে আসছেন। তাঁদের ধারণা, এই ইমিগ্রেন্টদেরকে সুযোগ দিলে তাঁরা চাকরীর বাজার দখল করে নিবেন। সে কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আসা হাইলি কোয়ালিফাইড এই সকল ইমিগ্রেন্টদেরকে রাখা হয়েছে শুধু ঐসকল কাজের জন্য যেগুলো কানাডিয়ানরা করতে চান না বা যেগুলো অতি অল্প বেতনের চাকরী। আর তাই দেখা গেছে টরন্টোর রেস্টুরেন্টগুলোতে চা-কফি ঢালছেন ইমিগ্রেন্টরা, পিজ্জা ডেলিভারি দিচ্ছেন ইমিগ্রেন্টরা, টয়লেটের ময়লা পরিষ্কার করছেন ইমিগ্রেন্টরা, টেক্সি চালাচ্ছেন ইমিগ্রেন্টরা, মিল-ফ্যাক্টরী আর কনস্ট্রাকশন কোম্পানীগুলোতে ভারি ভারি ও বিপজ্জনক কাজগুলো করছেন ইমিগ্রেন্টরা। আর এই কাজগুলোর বেশীরভাগই অতি নিু বেতনের কাজ।
ফলে স্বাভাবিক কারণেই টরন্টোর ইমিগ্রেন্ট অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে দরিদ্র কর্মজীবী লোকের সংখ্যা বেশী এবং এ সমস্ত এলাকায় নাগরিক সুযোগসুবিধা কম, ছেলে মেয়েদের মধ্যে স্কুল ড্রপআউটের সংখ্যা বেশী, বেকারত্ব বেশী, পরিবারে ভাঙ্গনের সংখ্যাও বেশী এবং সর্বপোরি অপরাধের ঘটনাও বেশী। এর অতি সাম্প্রতিক প্রমাণ হলো গত বছরের জুলাই মাসের সুটিং। টরন্টোর স্কারবরো এলাকার ড্যানজিং স্ট্রিটের এক ব্লক পার্টিতে এই সুটিং এর ঘটনা ঘটলে দুইজন প্রাণ হরান এবং আহত হন প্রায় ২২ জন। ঐ ঘটনায় টরন্টোতে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। এতবড় সুটিং এর ঘটনা টরন্টোতে নাকি আগে ঘটেনি। আর ঐ সুটিং এর স্থলটি ছিল দরিদ্র ইমিগ্রেন্টদের বসতি এলাকা।
জরীপ তথ্যে দেখা যায় ২০০০ সালে টরন্টো ডাউনটাউনের রিজেন্ট পার্ক এলাকায় কর্মজীবী দরিদ্র লোকের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশী। এর পর ২০০৫ সালে যোগ হয় টরন্টোর ফ্লেমিংডন পার্ক ও থর্নক্লিফ পার্ক এলাকা।
এখানে আরো লক্ষ্যনীয় যে, গত কয়েক দশকে টরন্টোতে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আয়ের ব্যবধান উল্ল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই শংকিত হয়ে পড়েছেন। এই শংকিতদের কেউ কেউ তাই বলছেন, প্রয়োজনে আরো বেশী করে টেক্স কাটা হোক যাতে করে ধনী-দরিদ্রের আয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনা যায়। কিন্তু সেটা কি সম্ভব? তাছাড়া রাজনীতিকরাওতো সে পথে যাবেন না। কারণ, টেক্সবাড়ানোর কথা বলা হলেই ভোট কম পাবার আশংকা থাকে তাঁদের। আর এটা কোন স্থায়ী সমাধানও নয়।
ইতিহাস সাক্ষী দেয়, কোন সমাজে বা রাষ্ট্রে ধনী ও দরিদ্র মানুষের আয়ের ব্যবধান ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলে সেখানে অবধারিতভাবেই সৃষ্টি হয় অস্থিরতার। দেখা দেয় নানান সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট। বৃদ্ধি পায় অপরাধ। স্কারবরোর ড্যানজিং স্ট্রিটের সাম্প্রতিক সুটিং এর ঘটনা তারই প্রমান। দেশে ধনী ও দরিদ্র মানুষের আয়ের ব্যাপক ব্যবধানের কারণে দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অগ্রগতিও ব্যাহত হয়। এ কারণে বিদ্যমান এই পরিস্থিতি সমাধানের ব্যাপারে যদি কানাডার বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ প্রয়োজনীয় সদিচ্ছা নিয়ে জরুরী ভিত্তিতে এগিয়ে না আসেন তবে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এখানকার নীতি নির্ধারকদের একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, ইমিগ্রেন্টদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে হলে তাঁদের পেশাভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। দূর করতে হবে কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স নামক বর্ণবাদী বাধাও।
আমরা মনে করি ইমিগ্রেন্টদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা যদি সঠিক ভাবে কাজে লাগানো যায় তবে উপকৃত হবেন উভয় পক্ষই।
খুরশিদ আলম, সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কন্ঠ
ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩