পেনশন, স্বাস্থ্যসেবা কানাডীয় সরকারগুলোকে অতিরিক্ত ২.২ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণের দিকে ঠেলে দেবে

॥ জেন গারসন ॥

সম্মানিত পাঠক, এই নিবন্ধটি পড়ার আগে নিচের ফুটনোটটি পড়ে নিন অনুগ্রহ করে।  – সম্পাদক

ফ্রেজার ইনস্টিটিউটের এক নতুন রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা খাতের ব্যয় নির্বাহ এবং প্রত্যেক কানাডীয়কে পেনশন দেয়া হলে দেশটিকে অতিরিক্ত আরও ২.২ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণের বোঝা বহন করতে হবে।

সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টের গবেষণায় বর্তমান কানাডীয় গোষ্ঠীগুলোর দায়দেনার হিসাব Ñ যার অর্থ হলো আজকের দিনে খুবই কম প্রত্যাশিত কর রাজস্বের ওপর বেঁচে থাকা জনগণের জন্য প্রতিশ্র“ত কর্মসূচির ব্যয় হিসাব করা হয়েছে।

আর যেহেতু জনগণের গড় বয়স বেড়েছে এবং অপেক্ষাকৃত স্বল্পসংখ্যক তরুণ কানাডীয় কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে এবং কর্মসূচিভিত্তিক অর্থব্যয়ের জন্য ট্যাক্স দিচ্ছে Ñ সেহেতু ঘাটতি বা বরাদ্দহীন দায়দেনা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। ২০০৭-০৮ সাল থেকে নিয়ে এই বৃদ্ধিও পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০% শতাংশেরও বেশি।

রক্ষণশীল থিঙ্ক-ট্যাঙ্কটির অর্থনৈতিক নীতি সংক্রান্ত আবাসিক স্কলার চার্লিস লেম্যান বলেন, ‘‘সরকার যেপথে চলছে সেই পথেই যদি চলতে থাকে তাহলে কিছু একটা ছাড় দিতে হবে (ংড়সবঃযরহম যধং মড়ঃ ঃড় মরাব ) ।’’ তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানের স্তরে ব্যয় ধরে রাখতে হলে ট্যাক্স বাড়াতে হবে কিংবা অন্যান্য কর্মসূচির সুবিধাবলী কমাতে হবে।’’

রিপোর্টে তিনটি বৃহত্তম সরকারি কর্মসূচির দিকে আলোকপাত করা হয়। এগুলো হলো : কানাডীয় পেনশন প্ল্যান, বৃদ্ধ বয়সের নিরাপত্তা, পাবলিক হেল্থ প্রোগ্রাম ও মেডিকেয়ার। এই কয়েকটি কর্মসূটিতে সরকারের ব্যয় হয় ২.২ ট্রিলিয়ন ডলার। রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ ঋণ এবং মোট বরাদ্দহীন দায়দেনার পরিমাণ মিলিয়ে ব্যয় ৪.১ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে।

মি. লেম্যান বলেন, ভবিষ্যতের দিকে এসব কর্মসূচি এগিয়ে নেয়ার পথে অর্থবরাদ্দ ধরে রাখতে হলে কী করা দরকার সে সম্পর্কে জ্ঞানের ক্ষেত্রে বিরাট ব্যবধান রয়ে গেছে।

তার ওপর, সরকারগুলো তাদের পরিচালনাগত ও মূল ব্যয় (ক্যাপিটাল স্পেন্ডিং) নির্বাহের জন্য শত শত কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে। মিউনিসিপ্যালিটি, প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য নেয়া প্রত্যক্ষ ঋণের পরিমাণ ২০০৭-০৮ সালের ৮৭২.২০ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০১১-১২ অর্থবছরে ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

অন্টারিও, কুইবেক এবং আলবার্টা হলো তিন প্রাদেশিক সরকার যারা যথাক্রমে কেন্দ্রীয় সরকারের দায়দেনার শীর্ষ বোঝা। অন্টারিওর ঋণের পরিমাণ ১.৬ ট্রিলিয়ন ডলার, কুইবেকের ৯৫৬ বিলিয়ন ডলার এবং আলবার্টার ৫৫৯.৬ বিলিয়ন ডলার।

মি. লেম্যান বলেন, ‘‘আমাদের কোন কোন কর্মসূচিতে সরকার নিজে থেকেই সুবিধাদানের প্রতিশ্র“তি দিয়েছে কিন্তু সেগুলোতে প্রতিশ্র“তির পুরো অর্থ দেয়া হয়নি।’’

এই রিপোর্টটি দেখেছেন এমন অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিপোর্টে কিছু যৌক্তিক  উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে ঠিকই কিন্তু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে কর রাজস্ব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে এই রিপোর্ট দৃশ্যত ব্যর্থ হয়েছে।

লাভেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক স্টিফেন গর্ডন বলেন, ‘‘এটি জনগণকে ঋণের ব্যাপারে ভীত করে তোলার একটি হীন প্রয়াস বলেই মনে হয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘মূল বিষয় হলো এই যে, ভবিষ্যৎ ব্যয়ের জন্য প্রতিশ্র“তিকে দেখতে হবে নিয়মিত ঋণের মত করে, আর সেটিই সঠিক, কিন্তু ভবিষ্যতের রাজস্ব আয়ের বিষয়টি উপেক্ষা করা হলে এটি দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে।’’

মি. গর্ডন ফ্রেজার ইনস্টিটিউটের সিপিপি দায়দেনা হিসাবের মডেলে কর্মসূচিগুলোতে ভবিষ্যতের রাজস্ব অবদানের হিসাব বাইরে রাখার বিষয়টি উল্ল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘এই উপসংহারে আসা একেবারেই ভুল যে, একটি সংকট আসন্ন এবং এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’’ ‘‘একই ব্যাপার ঘটেছে মেডিকেয়ারের ক্ষেত্রেও। স্বাস্থ্যসেবা দানে যে ব্যয় হচ্ছে সেটি মূল্যমানের দিক থেকে খুবই বিরাট অঙ্ক। কিন্তু এটিকে সামলাতে হবে আরেকটি বিরাট অঙ্কের ব্যয় দিয়েই, যা আসবে বর্তমানের কর রাজস্ব খাত থেকে এবং তা ভবিষ্যতে বাড়বে বলে আশা করা যায়।’’

একইভাবে ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইভি স্কুল অব বিজনেসের সহকারী অধ্যাপক মাইক মোফাট বলেন যে, কর্মসূচিতে প্রত্যাশিত ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আগামীতে করদাতাদের সম্পর্ক হ্রাস পাওয়ার বিষয়টির প্রতি আলোকপাত করার ক্ষেত্রে ফ্রেজার ইনস্টিটিউটের রিপোর্টটি মূল্যবান।

তিনি বলেন, ‘‘আমি এটিকে ‘বরাদ্দহীন দায়দেনা’র ইস্যু বলবো কিনা সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। আমার মনে হয় এটি বরং নিছক একটি জনসংখ্যাগত ইস্যু।’’

 Ñ সৌজন্যে : ন্যাশনাল পোস্ট

ফ্রেজার ইনস্টিটিউট একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিবন্ধিত হলেও এর চরিত্র নিয়ে কানাডার সুধি সমাজে প্রশ্ন রয়েছে। তারা বলছেন, এটি একটি শতভাগ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। চরম ডানপন্থী এই প্রতিষ্ঠানের একমাত্র কাজ হলো একটি ‘কর্পোরেট প্রচারণা কৌশলের’ মাধ্যমে কানাডার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ছিনতাই করে বৃহৎ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও তাদের নিয়ন্ত্রণকারী অত্যধিক সম্পদশালী পরিবারগুলোর স্বার্থে কাজে লাগানো। তারা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি কানাডাবাসীর রাজনৈতিক মনোভাব পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারের অতিডানপন্থী রক্ষণশীল দলকে ক্ষমতায় আনতে এবং স্থায়ীভাবে ক্ষমতাসীন দেখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কানাডার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতকে বেসরকারীকরণের পক্ষে ওকালতি করে ফ্রেজার ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত বার্ষিক রিপোর্টের অসঙ্গতি তুলে ধরে কানাডার নোভা স্কশিয়ার অর্থমন্ত্রী গ্রাহাম স্টিল বলেছেন, ফ্রেজার ইনস্টিটিউট কতগুলো আবর্জনা প্রকাশ করে। এটি কোন সিরিয়াস ধরণের ইনস্টিটিউট নয়। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি রাজনৈতিক সংগঠন।

এপ্রিল ২৮, ২০১৪