পশ্চিমাদের নিকাব নিষিদ্ধ করা উচিৎ

তারেক ফাত্তা

মুসলিম সরকারি কর্মচারিদের কর্মক্ষেত্রে মাথার আবরণ হিসেবে  হিজাবকে নিষিদ্ধ করার কুইবেক কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা যখন পুরো কানাডায় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে তখন বৃটেনে নিকাবের ব্যবহার নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে।

সম্প্রতি লন্ডনের ব্ল্যাকফ্রিয়ার্স ক্রাউন কোর্টের বৃটিশ বিচারকদের দেয়া এক আদেশে এই বিতর্ক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। শুধুমাত্র ডি নামে পরিচিতি লাভকারী এক মুসলিম নারী ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে যাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে তিনি তার আদালতে নিকাব পড়ে হাজির হতে পারবেন বলে রুল জারি করেছেন এক বিচারক।

এই রুল সমগ্র বৃটেনকে সাংঘাতিকরকম নাড়া দিলেও বিচারক পিটার মারফি স্বীকার করেন যে, মুখ ঢেকে অর্থাৎ নিকাব পড়ে আদালতে হাজিরা দিতে অনুমতি দেয়ার এই আদেশ শতবর্ষব্যাপী ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে ন্যায় বিচারের যে ধারা অব্যাহত রয়েছে তারই অংশ।

এই আদেশে আপতভাবে এটাই প্রতিয়মান হয় যে বিচারক কট্টর মুসলিমদের ধর্মীয় প্রহসন ও ভয়ভীতির কাছে পরাস্ত হয়েছেন এবং ধর্মীয় ভীতি প্রদর্শনকেই প্রশ্রয় দিয়েছেন। এই রায়ে সেইসব ইসলামপন্থীদের জয় হয়েছে যারা পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামের নামে এক রকম মধ্যযুগীয় নারী বিদ্বেষী অনুশাসনের সূচনা করেছে যারা কিনা তাদের এরকম গোড়ামীর সমালোচনাকারীকে বর্ণবাদী বা ইসলাম বিদ্বেষী বলতে এতটুকু দ্বিধা করে না। এদিক থেকে বলা যায় নেকাবের সমালোচনাকারীদের সঙ্গে লন্ডনের বিচারক অর্থহীন সমঝোতার চেষ্টা করেছেন।

তিনি বলেন যে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এবং সে জন্য স্বাক্ষ্য দেয় তবে তাকে মুখাবয়ব খুলে জুড়িকে মুখ দেখাতে হবে। বিচারক তার রুলে বলেন, বিবাদি যদি স্বাক্ষ্য দিতে চায় তবে তাকে অবশ্যই নিকাব খুলেই তা করতে হবে। এখানে তাই মূল বিষয়টা হচ্ছে “যদি”। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কেউ যখন কোন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয় তখন সে চাইলে তার স্বাক্ষ্য না দেয়ার অধিকার প্রয়োগ করতে পারে এবং ক্রাউন কোর্ট কর্তৃক চাপ প্রয়োগ করা এড়িয়ে যেতে পারে। বাস্তবে তাই অধিকাংশ মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি তার এই অধিকারের প্রয়োগ করে কোর্ট কর্তৃক তাকে জেরা করা এড়িয়ে যায়।

এভাবে সামগ্রিক অবস্থার প্রেক্ষিতে এটা স্পষ্টতই প্রতিয়মান হয় যে লন্ডন কোর্টে অভিযুক্ত নারী দোষী বা নির্দোষী যাই সাব্যস্ত হোক না কেন তার মুখ কেউ কখনো দেখতে পাবে না।

বিচারক মারফি তার সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাম্প্রতিক কানাডিয়ান সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত একটি মামলার উপর জোর দেন। এই কানাডিয়ান মামলায় “এনএস” নামে চিহ্নিত যৌন হয়রানির শিকার এক মুসলিম নারী আদালতে নিকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

গ্রেট বৃটেনের অভিযুক্ত ডি এবং কানাডার ফরিয়াদী এনএস-এর উভর মামলার মূলে রয়েছে নারীর মুখ ঢেকে রেখে পর্দা করার দাবি যা কিনা তার ধর্মীয় অনুশাসন এবং স্বাধীনতার অংশ। তাই এটি তার মৌলিক মানবাধিকার।

সব কিছুর পর তাই বাস্তবতা হচ্ছে কোন অমুসলিম এখন পর্যন্ত গোড়া মুসলিম বা ইসলামপন্থীদের আরোপ করা এই নেকাবকে ধর্মীয় আদেশ বা চিহ্ন হিসেবে ভুল প্রমাণিত করা বা বলার সাহস করেনি এবং বলতে পারেনি যে নেকাব দিয়ে পর্দা করার এই প্রথা বা রীতি যতটা না ধর্মীয় সংস্কৃতি তারচেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রহসনমূলক। তাদের এই ব্যর্থতা তাই পশ্চিমা সমাজের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীদের বিজয়কেই ইঙ্গীত করে।

-সৌজন্যে : টরন্টো সান

ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩