ন্যূনতম মজুরী ১৫ ডলার : কর্মজীবী মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবী পূরণ

অন্টারিওতে অবশেষে সাধারণ কর্মজীবী মানুষের মজুরী বৃদ্ধির দাবী পুরণ হতে যাচ্ছে। তাদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল এই প্রভিন্সে ন্যূনতম মজুরী ১৫ ডলারে উন্নীত করতে হবে। গত ৩০ মে প্রিমিয়ার ক্যাথলিন উইন ঘোষণা দেন অন্টারিওতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরী পর্যায়ক্রমে ১৫ ডলারে উন্নীত করা হবে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে।

ক্যাথলিন উইনের ঘোষণায় আরো বলা হয় – ফুলটাইম ওয়ার্কারদেরকে যে রেটে বেতন দেয়া হয় পার্টটাইম ওয়ার্কারদেরও সেই রেটেই বেতন দিতে হবে। আর যারা তিন বছরের অধিক সময় ধরে কোন কোম্পানীতে কাজ করছেন তাদের জন্য দুই সপ্তাহের বদলে তিন সপ্তাহের পেইড ভ্যাকেশনের ব্যবস্থাও করতে হবে।

ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধির এই পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত করা হবে। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানের ন্যূনতম বেতন ১১.৪০ ডলার আগামী অক্টোবর মাসে বৃদ্ধি করে ১১.৬০ ডলারে করা হবে। এর পর ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে ন্যূনতম মজুরী ঘন্টায় ১৪ ডলার এবং ২০১৯ সালে ন্যূনতম মজুরী ঘন্টায় ১৫ ডলার করা হবে।

উল্লেখ্য যে, অন্টারিওতে অনেক কর্মস্থলে অনেক কর্মী তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যান্ডার্ডস এক্ট এন্ড দি লেবার রিলেশনস এক্ট এর পর্যালোচনার পর গত বছর জুলাই মাসে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল এই অভিমত প্রকাশ করেছিলেন।

অন্টারিওর শ্রম মন্ত্রী কেভিন ফ্লেন ইতিপূর্বে বলেছিলেন, তরুন কর্মী ও নতুন ইমিগ্রেন্টরা চাকরী ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। তাদেরকে উপযুক্ত বেতন দেওয়া হয় না, ভেকেশন পে দেওয়া হয় না, দেওয়া হয় না অন্যান্য বেনিফিটসও। এই অনিয়মটি ঘটছে প্রধানত রিটেইল, হসপিটালিটি এবং কনস্ট্রাকশন সাইটে। এক শ্রেণীর অসাধু চাকুরীদাতাদের কারণে এ জাতীয় ঘটনা ঘটছে।

ক্যাথলিন উইন বলেন, বর্তমানে অন্টারিওতে ন্যূনতম বেতনে কাজ করছেন শতকরা ১০ জন শ্রমিক। আর শতকরা ৩০ জন শ্রমিক বেতন পাচ্ছেন ঘন্টায় ১৫ ডলারের কম। তার অর্থ হচেছ এই প্রভিন্সে কয়েক মিলিয়ন শ্রমিক যা আয় করছেন তা তাদের পরিবারকে সাহায্য করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নয়। বাড়ি কেনা দূরে থাকুক, দৈনন্দিন খরচপত্র যোগাড় করতে গিয়েই তারা হিমসিম খাচ্ছেন।

স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার এক হিসেবে দেখা যায় এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে টরন্টোতে মধ্য পর্যায়ের আয় করেন এমন একজন অস্থায়ী কর্মীর বেতন ঘন্টায় ১৫ ডলারের মত। অন্যদিকে সমান অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতা নিয়ে একজন স্থায়ী কর্মী বেতন পাচ্ছেন ঘন্টায় ২২.৫০ ডলার। এই হিসেবে স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীর মধ্যে বেতন বৈষম্য দাড়ায় ৩৩%। নন-ইউনিনাইজড কর্মপরিবেশে বেতনের এই বৈষম্য আরো বেশী।

এভাবেই “অন্টারিও’র দীর্ঘ দিনের পুরানো গুণে ধরা এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যান্ডার্ড এ্যাক্ট এর ফাঁকফোকর গলিয়ে একশ্রেণীর অসাধু মালিকেরা শ্রমজীবী মানুষকে ঠকিয়ে যাচ্ছেন অনেক বছর ধরেই। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে অন্টারিওতে যেখানে শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়। ফলে ঐ শ্রমিকরা যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন বা প্রতিবাদ করবেন তারও কোন উপায় নেই।

অন্টারিওর এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যান্ডার্ডস এ্যক্ট এন্ড দি লেবার রিলেশনস এ্যক্ট এর পর্যালোচনার পর দুই সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল যে বিষয়গুলো সংস্কারের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন তা বিবেচনা করে অন্টারিও সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী বছরের মধ্যেই এই গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশসমূহ অধিকাংশ বাস্তবায়িত করা হবে।

উল্লেখ্য যে, অন্টারিওতে বর্তমান ন্যূনতম মজুরী ১১.৪০ ডলার। এটি বৃদ্ধি করা হয়েছে গত বছর অক্টোবর মাসে। তার আগে ন্যূনতম মজুরী ছিল ঘন্টায় ১১.২৫ ডলার। ২০০৩ সালে অন্টারিওতে লিবারেল দল ক্ষমতায় আসার পর এ নিয়ে প্রায় ১২ বার ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে নামমাত্র এই মজুরী বৃদ্ধি অন্টারিওর কর্মজীবী দরিদ্র জনগোষ্ঠির কোন উপকারেই আসেনি। উপরন্তু, ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধির আইন দারিদ্র বিমোচনের পরিবর্তে দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য কাজ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর করে তুলে এবং কাজ পেলেও পর্যাপ্ত আওয়ার পান না তারা। পাশাপাশি বাড়ি ভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যও বৃদ্ধি পেতে থাকে পাল্লা দিয়ে।

অন্টারিতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ন্যূনতম মজুরী ঘন্টায় ১৫ ডলারে করার দাবী জানিয়ে আসছিল দীর্ঘ দিন ধরেই। কিন্তু প্রতিবারই নামমাত্র বেতন বৃদ্ধি করা হয়ে আসছিল। ফলে শ্রমিকদের অর্থনৈতিক অবস্থার কোন উন্নতিই ঘটেনি বাস্তব অর্থে। এবার অন্টারিওর ক্ষমতাসীন সরকার শ্রমিকদের এই দাবী মেনে নেয়। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।

জুন ১০, ২০১৭