টরন্টোতে বিদ্বেষমূলক অপরাধ
টরন্টো পুলিশের হেইট ক্রাইম ইউনিটের সর্বশেষ প্রকাশিত এক রিপোর্ট বলা হয়েছে এখানে হেইট ক্রাইম বা বিদ্বেষমূলক অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের হিসাব মতে টরন্টোতে গত বছর ১৮৬টি বিদ্বেষমূলক অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এই অপরাধগুলোর মধ্যে ছিলো সম্পদের ক্ষতিসাধন, গুন্ডামী, দেয়ালে বিদ্বেষমূলক চিত্র বা মন্তব্য আঁকা ইত্যাদি। সাম্প্রতিক সময়ে এটি সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।
উক্ত রিপোর্টে আরো দেখা গেছে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধ ঘটছে ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে। ২০১৭ সালে সংঘটিত বিদ্বেষী অপরাধের ২৮ শতাংশ ঘটেছে ইহুদিদের টার্গেট করে এবং ১৮ ভাগ ঘটেছে মুসলিমদের টার্গেট করে।
তবে এর বাইরেও অনেক ঘটনা আছে যেগুলো পুলিশের নথিতে লিপিবদ্ধ হয়নি। কারণ, যারা বিদ্বেষের শিকার হন তারা অনেকেই বিষয়টি নিয়ে পুলিশ পর্যন্ত যেতে চান না। ভাষার দূর্বলতা, অভিযোগ করলে পুনরায় বিদ্বেষের শিকার হওয়ার ভয় বা অভিযোগ করতে গেলে তাদের প্রতি কি ধরণের আচরণ করা হবে এগুলো বিবেচনায় রেখে অনেকেই বিদ্বেষের শিকার হয়েও চুপ থাকেন। পুলিশের হেট ক্রাইম ইউনিটও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত।
অন্যের প্রতি বিদ্বেষী আচরণ সর্বদাই নিন্দনীয়। কারো গায়ের রং, ধর্মীয় বিশ্বাস ইত্যাদি নিয়ে কটাক্ষ করা, হুমকী প্রদান করা, ঘৃণা প্রকাশ করা বিদ্বেষী অপরাধের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু তারপরও এগুলো হচ্ছে এবং কানাডার মত একটি সুসভ্য ও আধুনিক দেশেও এই অপরাধটি হচ্ছে। স্মরণ করা যেতে পারে যে, গত বছর ১৭ ফেব্রুয়ারী ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন প্রচারপত্র ও ব্যানার হাতে নিয়ে একদল লোক টরন্টোর ডাউনটাউনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি মসজিদের বাইরে সমবেত হয়ে ইসলাম নিষিদ্ধ করার দাবী জানান। এই সময় মসজিদের ভিতরে মুসল্লিগণ জুমার নামাজ আদায় করছিলেন। ঐ একই বছর কানাডার ফেডারেল পার্লামেন্টে এন্টি-ইসলামোফোবিয়া প্রস্তাব পেশ করায় পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত লিবারেল এমপি ইকরা খালিদকে হত্যার হুমকী দেয়া হয়। অনলাইনে তার বিরুদ্ধে আরো যে সব হুমকী দেয়া হয় তার কয়েকটি তিনি পার্লামেন্টে পড়ে শুনান। এর মধ্যে আছে,
* তাকে হত্যা কর। সে রোগগ্রস্থ, তাকে এই দেশ থেকে বহিস্কার করা প্রয়োজন।
* আমরা তোমাদের মসজিদগুলো পুড়িয়ে দিব।
* কানাডিয়ানরা কেন তাকে এ দেশে আসতে দিয়েছে? তাকে তার দেশে ফেরত পাঠিয়ে দাও।
কানাডার মত একটি সুসভ্য ও মাল্টিকালচারাল এবং মাল্টিফেইথ এর দেশে এরকম বিদ্বেষী প্রচারণা বা হুমকী মুসলিম অথবা ইহুদী বা অন্য যে কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে করা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় ।
আমরা জানি অন্টারিওতে সিস্টেমিক রেসিজম বা বিদ্বেষী আচরণকে নির্মূল করার জন্য সরকার ২০১৭ সালে তিন বছর মেয়াদী একটি কৌশল হাতে নিয়েছে। এখানকার অদিবাসী ও বিভিন্ন এথনিক এবং ধর্মীয় সম্প্রদায় বর্ণবাদের কারণে যে সকল বাধার সম্মূখীন হচ্ছেন তা দূর করার লক্ষ্যে এই প্রচেষ্টা। এই প্রচেষ্টা কতটুকু ফলপ্রসু হবে তা এখনি বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা মনে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ, যারা বিদ্বেষী আচরণ করেন তারা হয়তো না বুঝেই কাজটি করেন বা শিক্ষার অভাবে এমন আচরণ করেন। আর যারা বিদ্বেষী আচরণের শিকার হন তাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে চুপ না থেকে। অভিযোগ করতে হবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে। প্রতিবাদ করতে হবে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে। মনে রাখতে হবে, আমরা এমন একটি দেশে বাস করি যেখানে মানবাধিকারকে অতিশয় গুরুত্ব দেয়া হয়। যখন কারো প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণা প্রকাশ করা হয় তখন তার মানবাধিকারকে ক্ষুন্ন করা হয়।
আর সেই অধিকারকে ক্ষুন্ন হতে দেয়া যাবে না কতিপয় মূর্খ ও বিচারবুদ্ধিহীন নাগরিকের কারণে।
মে ৫, ২০১৮