জঙ্গীবাদ ও কানাডার মুসলিম ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটি
সাবেক কনজারভেটিভ সরকারের একটি ধারণা ছিল কানাডায় জঙ্গীবাদের সূতিকাগার এখানকার মুসলিম কমিউনিটি। মুসলিম কমিউনিটির প্ররোচনা আর উৎসাহেই এখানকার হোমগ্রোন টেররিস্টরা সক্রিয় হয়ে উঠে। আর সেই ধারণার বশবর্তী হয়ে মুসলিম বিদ্ধেষী হিসাবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার ২০১৪ সালে একটি গবেষণা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সম্প্রতি ঐ গবেষনা রিপোর্টটি প্রকাশ করে সিবিসি নিউজ। গবেষণা পত্রে বলা হয়, কানাডায় জঙ্গীবাদের সূতিকাগার ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটি নয়।
গবেষণার কাজটি যারা করেছেন তারা আফগানিস্তান, সোমালিয়া, সিরিয়া ও শ্রীলংকা থেকে আগত তামিলদেরকে কেন্দ্র করে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। উল্লেখ্য যে, তামিলরা মুসলিম না হলেও তামিল টাইগার্স গ্রুপকে কানাডা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে বিবেচনা করে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে কানাডায় বসবাসরত এই সম্প্রদায়ের লোকেরা বরং কানাডা থেকে জঙ্গীবাদকে নির্মূল করার জন্য সদা প্রস্তুত।
গবেষকগণ আরো দেখতে পান, কানাডার বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা এবং মুসলিম ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে পারষ্পরিক অনাস্থা সৃষ্টির পিছনে মূলত কাজ করেছে কিছু জাতীয় সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল। এর সাথে আছেন একদল বুদ্ধিজীবীও যারা মুসলিম ইমিগ্রেন্টদেরকে বরাবরই কানাডার জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকী হিসাবে চিহ্নিত করে আসছেন। ফলে কানাডায় মুসলিম জনগোষ্ঠির প্রতি সাধারণ মানুষের ব্যাপক সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে এবং একই সাথে বৈষম্যের মনোভাবও তৈরী হয়েছে।
এই গবেষণা রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার মাত্র কিছুদিন আগে আমরা আরেকটি জরীপ রিপোর্ট প্রকাশিত হতে দেখেছি যাতে বলা হয়েছে কানাডায় শতকরা ৮৩ ভাগ মুসলিম নিজেদেরকে কানাডীয় ভেবে খুবই গর্ববোধ করেন। ৯৪% মুসলিম কানাডিয়ান জানিয়েছেন কানাডার প্রতি তাদের একাত্মতার অনুভূতি খুবই শক্তিশালী। জরীপ কার্যটি পরিচালিত হয় এনভাইরনিকস ইন্সিটিউট নামের একটি সংস্থার অধিনে।
উপরে উল্লেখিত এই জরীপ রিপোর্টও প্রমাণ করে যে কানাডার মুসলিম কমিউনিটি জঙ্গীবাদের সূতিকাগার নয়। এখানকার সাধারণ মুসলিম জনতা শান্তিপ্রিয় এবং তারা জঙ্গীবাদের বিরোধী। গবেষণায় এরকম তথ্যও উঠে এসেছে যে, এই ইমিগ্রেন্ট সম্প্রদায়ের সদস্যরাই অনেক সময় নিরাপত্তা এজেন্সীকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে। আর কার্যত হয়েও আসছে তাই। কানাডার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সময় সময় এই কমিউনিটির কাছ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে এখানে জঙ্গী তৎপরতা হচ্ছে কি হচ্ছে না।
তবে গবেষনা পত্র বা জরীপ রিপোর্ট থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা নিয়ে তৃপ্ত হয়ে বসে থাকলে হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে কানাডার মুসলিম ইমিগ্রেন্ট কমিউনিট জঙ্গীবাদের সূতিকাগার না হলেও এদেশে জঙ্গীদের তৎপরতা নেই একথা বলা যাবে না। ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি, কানাডার পার্লামেন্ট ভবন সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। ঐ হামলায় নিহত হয়েছেন একজন তরুন কানাডীয় সৈন্য। তারো আগে কুইবেকে একজন কানাডীয় সৈন্য নিহত হয়েছেন সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে। তিউনিশিয়ার এক মুসলমান যুবক গ্রেফতার হয়েছেন কানাডার ভিয়া (ারধ) রেল সেতু ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করায়। পাকিস্তানী এক মুসলমান যুবক গ্রেফতার হয়েছেন টরন্টোর মার্কিন কনসুলেট অফিস উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করায়। মন্ট্রিয়লের বিমান বন্দর থেকে ১০ জন যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছিল যারা জঙ্গী সংগঠন আই এস এর সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য দেশ ত্যাগ করতে যাচ্ছিল। সন্ত্রাসী সংগঠন আই এস এ যোগ দেওয়ার জন্য ৪ জন বাঙ্গালী তরুন কানাডা ছেড়েছেন এমন খবরও রয়েছে। আর সর্বশেষ খবর হলো কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরী নামের এক যুবক জঙ্গী সংগঠন আইএস এর বাংলাদেশ শাখার প্রধান বলে চিহ্নিত হয়েছেন। কয়েক বছর আগে টরন্টোতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ১৮ জন মুসলমান যুবক যারা পার্লামেন্ট ভবন সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ভবন বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
সুতরাং সদা সতর্ক আমাদের থাকতেই হচ্ছে। সতর্ক থাকতে হবে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা সংস্থাকে, সতর্ক থাকতে হবে কানাডার সাধারণ মুসলিম জনতাকেও।
জুন ১৪, ২০১৬