কানাডার আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচন
বাংলাদেশী কানাডিয়ানরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না
কানাডার ৪২তম পার্লামেন্ট বা জাতীয় নির্বাচনে এবার বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনস্থির করেছেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর। তবে কানাডার রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ অথবা তার প্রতিনিধি গভর্নর জেনারেল ডেভিড জনস্টোন ইচ্ছে করলে নির্ধারিত তারিখের আগেই নির্বাচনের ডাক দিতে পারেন। এবার নির্বাচনে আসন সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমান ৩০৮ আসনের পরিবর্তে আগামী নির্বাচনে ৩৩৮ টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে ইতিমধ্যে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্ত, ব্যারিস্টার কামরুল হাফিজ আহমেদ, শামসুল ইসলাম, আলমগীর হোসাইন ও মোহাম্মদ আলী বোখারী। এদের মধ্যে ব্যরিস্টার কামরুল হাফিজ ছাড়া বাকী সবাই স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা যায়। ব্যারিস্টার কামরুল হাফিজ প্রতিদ্ধন্দ্বিতা করবেন বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং থেকে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের অধিকাংশই থাকেন এই দুই রাইডিং এলাকায় যেটি বিভক্ত হয়েছে ভিক্টোরিয়া পার্ক এ্যাভিনির মাধ্যমে। ভিক্টোরিয়া পার্ক এ্যাভিনিউর পশ্চিমে অবস্থিত বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং এবং পূর্বে অবস্থিত স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং। এই দুই রাইডিংয়ে প্রায় দশ হাজার বাংলাদেশী কানাডিয়ান ভোটার রয়েছেন যা আগামী নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবান্বিত করার জন্য একটি বড় রকমের ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
আমরা মনে করি যে কজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান কানাডার আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনস্থির করেছেন তারা একটি যুগান্তকারী ও সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পচন ধরা বাংলাদেশী নষ্ট রাজনীতির কবল থেকে বের হয়ে এসে কানাডার জাতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহনে সক্রিয় হয়ে উঠার এই যে তৎপরতা শুরু হয়েছে এটিকে যে কোন অর্থেই উৎসাহব্যাঞ্জক বলতে হবে। আমরা জানি এবং দেখেছি, কানাডায় বাংলাদেশের জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা খুলে (যা আইনত বৈধ নয়) যারা দীর্ঘদিন এখানে বাংলাদেশের রাজনীতি করার চেষ্টা করে আসছেন তারা কমিউনিটিতে দলাদলী ও বিভক্তি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেননি। তাই এই পরিস্থিতিতে আজকে যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কানাডার জাতীয় রাজনীতিতে অংগ্রহন করবেন, তারা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য বলে আমরা মনে করি। আমরা আরো মনে করি, আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহনের সুযোগ পাক বা না পাক, নির্বাচনে জয়ী হোক বা না হোক, জাতীয় নির্বাচনে তাদের এই অংশগ্রহনের সিদ্ধান্তটাই কানাডায় বাংলাদেশী কমিউনিটিকে কয়েকধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং থেকে এ পর্যন্ত যে কয়জন বাংলাদেশী কানাডিয়ান প্রার্থী হওয়ার জন্য মনস্থির করেছেন তারা সকলেই লিবারেল দলকে টার্গেট করেছেন। অন্যদিকে বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং-এ এখন পর্যন্ত একক বাংলাদেশী কানাডিয়ান প্রার্থী হিসেবে আছেন ব্যারিস্টার কামরুল হাফিজ। তিনি প্রার্থী হবেন কনজারভেটিভ দল থেকে। এ বিষয়ে কমিউনিটির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে যে ধারণা পাওয়া যায় তা হলো, বাংলাদেশী কানাডিয়ানরা কানাডার জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহন করার জন্য এগিয়ে আসাতে তারা সকলেই আনন্দিত।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং থেকে এ্যামি নামে এক শ্বেতাঙ্গিনী নমিনেশন পাওয়ার জন্য লড়ছেন। তিনি দীর্ঘ প্রায় এক দশকেরও বেশী সময় ধরে এই রাইডিং এ লিবারেল দলের হয়ে কাজ করছেন বলে জানান আমাদের কমিউনিটি থেকে আসন্ন সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদ প্রার্থী রাসেল রহমান। এ্যামির ওয়েবসাইটে খোঁজ নিয়েও দেখা গেছে তিনি বেশ গুছিয়ে এগুচ্ছেন। তিনি যেহেতু দীর্ঘদিন লিবারেল দলের হয়ে স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এ কাজ করে আসছেন সেহেতু ধরে নেয়া যায় তিনি একজন শক্তিশালী প্রার্থী। প্রার্থী আরো কয়েকজন আছেন অন্যান্য কমিউনিটি থেকে। সুতরাং স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এ লিবারেল দল থেকে নমিনেশন পেতে হলে আগ্রহী বাংলাদেশী কানাডিয়ান প্রার্থীদেরকে যথেষ্ট শক্তি নিয়েই মাঠে নামতে হবে। অত্র রাইডিং এ ৫ হাজার বাংলাদেশী ভোটার আছেন এই হিসাব নিয়ে তৃপ্ত হয়ে নিশ্চিতে ঘরে বসে থাকলে হবে না। কাজ করতে হবে তৃনমূল পর্যায়ে। নক করতে হবে প্রতিটি ভোটারের দ্বারে দ্বারে। তাদেরকে বুঝাতে হবে যে আমরা ভিজিবল মাইনরিটির লোক বলে পার্লামেন্টে শুধু আমাদেরই স্বার্থ দেখবো তা নয়। সকলের স্বার্থই আমরা দেখবো।
এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় কাজ নমিনেশন যুদ্ধে আটঘাট বেধে নামা। নমিনেশনের ব্যাপারে কোন প্রার্থীকে সমর্থন করতে হলে প্রথমে একজন ভোটার বা নাগরিককে নির্দিষ্ট ঐ দলের সদস্য হতে হবে। ১০ ডলার চাঁদা দিয়ে যে কেউ দলের সদস্য হতে পারেন। তবে তাকে নির্দিষ্ট ঐ এলাকার বাসিন্দা হতে হবে, বয়স ১৪ বা তার বেশী হতে হবে, এবং অন্য কোন দলে সদস্য পদ রাখা যাবে না। এ বছর মাঝামাঝি সময়ে বিভিন্ন দলের রাইডিং এসেসিয়েশনের সম্মেলনে নমিনেশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও একটি সিদ্ধান্তের ব্যাপার থাকতে পারে কাকে চূড়ান্তভাবে নমিনেশন দেয়া হবে। সুতরাং লবিং সেখানেও করতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে যে স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এবং বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং এ বাংলাদেশী কানাডিয়ানদের একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে যেটি নির্বাচেনর ফলালফকে যথেষ্টমাত্রায় প্রভাবান্বিত করতে পারে।
কোন প্রার্থীকে নমিনেশন দেয়ার ব্যাপারে প্রতিটি দলের নিজ নিজ কিছু নীতিমালা রয়েছে সাধারণ নিয়মের বাইরে। নির্বাচনে অবশ্য কেউ ইচ্ছে করলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও দাড়াতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দলের নমিনেশন পাওয়ার যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে না। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাড়ালে বাংলাদেশী কানাডিয়ান কোন প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা খুবই কম বা বলা যায় একেবারেই নেই। কারণ কোন বাংলাদেশী কানাডিয়ানেরই কমিউনিটির বাইরে কোন পরিচিতি নেই। সুতরাং জিততে হলে দলের প্রার্থী হয়েই লড়াই করতে হবে। দলের ভোট এবং বাংলাদেশী কানাডিয়ানদের ভোট মিলিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার একটা সম্ভাবনা অবশ্যই রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ফেডারেল বা জাতীয় নির্বাচনে কেউ প্রার্থী হতে চাইলে তাকে কানাডার নাগরিক হতে হবে। নির্বাচনের দিন প্রার্থীর বয়স ১৮ বা তার উর্ধে হতে হবে। প্রার্থীকে নির্দিষ্ট ঐ রাইডিং এর বাসিন্দা হতে হবে বা ভোটার হবে হবে তেমন কোন শর্ত নেই। তবে বাসিন্দা হলে তার ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
আমরা জানি, কানাডায় বাংলাদেশীদের অবস্থান খুব বেশী দিনের নয়। ব্যাপকহারে বাংলাদেশীদের আসা শুরু হয় গত শতকের শেষ দশক থেকে। তবে সাম্প্রতিককালে আসার এই ব্যাপকতা অনেক কমে গেছে কানাডার ইমিগ্রেশন পলিসি পরিবর্তন করায়। গত দুই দশকে যারা কানাডায় এসেছেন তাদের বেশীর ভাগই উঠেছেন টরন্টোর ভিক্টোরিয়া পার্ক ও ড্যানফোর্থ এলাকার বিভিন্ন এপার্টমেন্ট ও বাড়িতে। টরন্টোতে মোট বাংলাদেশী কানাডিয়ান ও ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা কত তা নিয়ে প্রামানিক বা নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য কমিউনিটির কারো কাছে পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্নজন যা অনুমান করেন তার গড় হিসাব করলে টরন্টোতে প্রায় ৬০ হাজার বাংলাদেশী থাকেন বলে ধরা যেতে পারে। আর এদের বেশীর ভাগই থাকেন ভিক্টোরিয়া পার্ক ও ড্যানফোর্থ এলাকায়। আগেই উল্লেখ করেছি এই এলাকায় বাংলাদেশী কানাডিয়ান ভোটারের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। বাংলাদেশীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও কর্মকান্ড পরিচালিত হয় মূলত এই ড্যানফোর্থকে কেন্দ্র করেই। দুর-দুরান্ত থেকে বাংলাদেশীরা এই এলাকাতেই আসেন সাপ্তাহিক বাজার-সদাই করতে বা বিভিন্ন পর্ব উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানসমূহ উপভোগ করতে। ড্যানফোর্থ ও ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় বাঙ্গালীদের ঘনবসতি হওয়ার কারনে দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকা থেকে একজন জনপ্রতিনিধী নির্বাচনের দাবী কমিউনিটির লোকেরা সযতেœ লালন করে আসছিলেন মনে মনে। এবার সম্ভবত সেই সুযোগ এসেছে। তাই আমরা সকলে মিলে যদি চেষ্টা করি তবে আমাদের কমিউনিটি থেকে জাতীয় পর্যায়ে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েও যেতে পারেন। চেষ্টা করতে তো দোষ নেই। চেষ্টা করেও যদি না পাই, তবে অন্তত পরের বারের জন্য তো ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে থাকলো এবং অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় হয়ে রইল।
সবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ওবামার ভাষায় বলতে হয়, “নাথিং ইজ ইমপসিবল।”
[ বি.দ্র. সন্মানিত পাঠক, আপনাদের সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, টরন্টো থেকে প্রকাশিত বাংলা কাগজ এর সম্পাদনার দায়িত্বে আমি গত এপ্রিল মাস থেকে আর নেই। ২০০০ সালের ফেব্র“য়ারী মাস থেকে শুরু থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত আমি এর সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করে এসেছি।
সকলের সহযোগিতায় আগামী দিনগুলোতে বাংলা কাগজ আরো সুন্দর ও আরো পাঠকনন্দিত হবে এই কামনাই করছি। ]
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কন্ঠ
জুলাই ২৭, ২০১৪