কমিউনিটিতে এলডার এবিউজের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

কানাডায় ইমিগ্রেন্ট পরিবারগুলোতে এলডার এবিউজের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে অন্টারিওতে সাউথএশিয়ান পরিবারগুলোতে অধিকহারে বয়স্ক ব্যক্তিরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এমন খবর মেইনস্ট্রিম পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়ে আসছে অনেকদিন ধরেই। প্রবাসী বাংলাদেশীরাও এই সাউথ এশিয়ান পরিবারেরই অংশ।

দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও এই বয়স্ক ব্যক্তিদের অনেকেই পরিবার থেকে বের হয়ে আসছেন না। বের হয়ে না আসার পিছনে যে বিষয়গুলো তাদের বিবেচনায় থাকে তা হলো, নাতি-নাতনীদের কল্যান, আর্থিক বিষয়, ভাষার সমস্যা, যাতায়ত সমস্যা, কমিউনিটিতে পরিবারের বদনাম হওয়ার ভয়, ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা ইত্যাদি।

সমাজ কর্মীরা বলছেন, কানাডায় এলডার এবিউজ একটি গুরুতর এবং ক্রমবর্ধমান সমস্যা। কিন্তু এর প্রয়োজনীয় ও প্রকৃত চিত্রটি ফুটে উঠছে না কারণ, অনেক এবিউজের ঘটনা পরিবারের সদস্যরা বা এবিউজের শিকার ব্যক্তি নিজেই গোপন রাখেন। ধারণা করা হয় নর্থ আমেরিকায় ২ থেকে ১০ পার্সেন্ট বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিবছর কোন না কোন ধরণের নির্যাতনের শিকার হন।

কিন্তু কানাডার ইমিগ্রেন্ট পরিবারগুলোতে কত পার্সেন্ট বয়স্ক ব্যক্তি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সে বিষয়ে যথাযথভাবে কোন জরীপ এখনো চালানো হয়নি। তবে সমাজ কর্মীরা বলছেন, কিছু কিছু ইমিগ্রেন্ট পরিবারে এলডার এবিউজের ঘটনাগুলো সবেমাত্র প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।

এলডার এবিউজ মূলত পৃথিবীর সব দেশেই ঘটে থাকে। কোথাও কম কোথাও বেশী। কুসংস্কার, বিদ্বেষ এবং বৃদ্ধদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবই মূলত এলডার এবিউজ ঘটার পিছনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। আর যেহেতু এই এলডার এবিউজের সংখ্যা আমাদের ইমিগ্রেন্ট পরিবারগুলোতেও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই এ বিষয়ে এখনই সচেতন হওয়ার সময় এসেছে আমাদের।

এলডার এবিউজ সব বিবেচনায়ই একটি নিষ্ঠুর কাজ। বৃদ্ধ মানুষের অধিকার হরনের কাজ। অন্টারিও হিউম্যান রাইটস কমিশনও এই এবিউজকে মানবাধিকার লংঘন হিসাবে বিবেচনা করে। কমিশন মনে করে সরকার ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের দায়িত্ব রয়েছে এ বিষয়টির উপর যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া।

এ বিষয়ে আমাদেরও একই মত। আমরা মনে করি কমিউনিটিতে এলডার এবিউজের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং পত্রপত্রিকাগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। আমরা আরো মনে করি আমাদের কমিউনিটির সিনিয়র সিটিজেনদেকে তথাকথিত লজ্জার আবরণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে অধিকার সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে এলডার এবিউজ কোন ছেলে খেলা নয়। অনেক ক্ষেত্রে এর সঙ্গে বয়স্ক ব্যক্তিদের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্নও জড়িত।

এপ্রিল ৯, ২০১৬