ইসলামোফোবিয়া : দোষ শুধু রক্ষণশীলদেরই নয়
গত ৩ জুন স্কারবরোর মার্কহাম ও লরেন্স ইন্টারসেকশনে অবস্থিত কানাডিয়ান টায়ারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এক মুসলিম মহিলা জঙ্গী হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। এই সময় তার মাথায় মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গী গোষ্ঠী ‘দায়েশ’ এর চিহ্ন আঁকা মস্তকাবরণ ছিল। হামলা চালানোর সময় তিনি জঙ্গী গোষ্ঠী দায়েশের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন। মহিলার নাম রিহাব দামেশ। জন্মসূত্রে সিরীয়, বয়স ৩২। দুটি শিশু সন্তান রয়েছে মহিলার। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে অতি সম্প্রতি। এই মহিলা গত ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল সিরিয়া যাওয়ার জন্য কানাডা ত্যাগ করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল সেখানকার জঙ্গীদের সঙ্গে সরাসরি যোগ দেয়া। কিন্তু তুরষ্কে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন। সেখান থেকে তাকে কানাডায় ফেরত পাঠানো হয়।
কানাডার বাইরে গিয়ে জঙ্গীদের সঙ্গে যোগ দেয়ার সুযোগ হারালেও রিহাব দামেশ এর মন থেকে জঙ্গীবাদের চিন্তুা দূর হয়নি। তিনি কানাডিয়ান টায়ারে প্রবেশ করে সেখানকার কর্মচারী ও ক্রেতাদের ওপর গলফ খেলার স্টিক ও বড় একটি ছুরি নিয়ে হামলা চালান। ঐ হামলায় কানাডিয়ান টায়ারের একজন কর্মচারী আহত হন। দামেশের পোশাকের ভেতরে লুকানো ছিল বড় ছুরিটি। হামলার সময় তিনি ঐ ছুরিটি বের করে হাতে নেন। তবে কানাডিয়ান টায়ারের কর্মচারী ও ক্রেতারা তার হাত থেকে ছুরিটি কেড়ে নিতে সক্ষম হন। কানাডার মাটিতে কোন মহিলা কর্তৃক জঙ্গী হামলা সম্ভবত এটাই প্রথম। আরসিএমপি তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছে।
রিহাব দামেশ যে এলাকায় জঙ্গী হামলা চালিয়েছেন সে এলাকায় প্রচুর সংখ্যক মুসলিমের বসবাস। আশে পাশে ছোট বড় বেশ কয়েকটি মসজিদ রয়েছে। টরন্টোর সবচেয়ে বড় মসজিদটি এই স্কারবরোতেই অবস্থিত যেটি নাগেট মসজিদ নামে পরিচিত। আরো রয়েছে জামে আবু বকর সিদ্দিকী মসজিদ। এটিও অনেক বড়। সুন্নাতুল জামাত এবং সালাহউদ্দিন মসজিদের ন্যায় বড় বড় মসজিদগুলোর অবস্থান এই স্কারবরোতেই। আর এই মসজিদগুলোর আশপাশে মুসলিম সম্প্রদায়ের আবাসই বেশী। এইসব এলাকায় হিজাব এবং বোরখা (নিকাবসহ) পরিহীতা মুসলিম নারীদের দেখা যায় বেশী। জুম্মার দিন এই মসজিদগুলোর আশপাশে দাড়ালে যে কারোরই ধারণা হতে পারে যে তিনি কোন মুসলিম দেশে বাস করছেন।
কিন্তু গত ৩ জুন রিহাব দামেশ যে কান্ডটি করে বসলেন তাতে করে স্থানীয় মুসলিমদের প্রতি অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের কি ধারণা হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। দামেশ শুধু যে হামলা করেই ক্ষান্ত হয়েছেন তা নয়। তিনি আদালতে দাড়িয়ে যে সকল উদ্ধত ও জঙ্গীবাদী হুমকী দিয়েছেন সেটিও মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করবে। তিনি আদালতে দাড়িয়ে বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনারা যদি আমাকে মুক্তি দেন তাহলে আমি আবারও এবং বারবার একই কাজ করবো।”
উল্ল্লেখ্য যে, কানাডায় আমরা বরাবরই রক্ষণশীলদের দোষ দিয়ে আসছি ইসলামোফোবিয়া সৃষ্টির জন্য। মুসলিমদের সম্পর্কে অহেতুক ভীতি তৈরী করে তারা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টায় লিপ্ত। গত ফেডারেল নির্বাচনের আগে স্টিফেন হারপারের নেতৃত্বাধিন কনজারভেটিভ পার্টি নেকাব ইস্যু ও বারবারিক কালচার ইস্যু তৈরী করে প্রপাগান্ডা কম করেনি। কিন্তু ঐ সব ইস্যু সৃষ্টির পিছনে কিছু অতি মুসলিমের কর্মকান্ডও কম দায়ী নয়। সুযোগটা তারাই তৈরী করে দিচ্ছেন আর কনজারভেটিভরা তা লুফে নিচ্ছেন। এবার রিহাব দামেশ যা করলেন সেটিও কনজারভেটিভরা লুফে নিবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। দামেশ যে নজীর সৃষ্টি করলেন তা মুসলিমদের ভাবমূর্তিকে কেবল ক্ষতিগ্রস্থই করবে।
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে সন্ত্রাস কখনোই কোন সমস্যার সমাধান নয়। এক সন্ত্রাস আরো সন্ত্রাসকে জন্ম দেয়। রিহাব দামেশ এর মত এরকম কট্টরপন্থী অতি মুসিলম কানাডায় আরো আছেন যারা কোন কিছু না বুঝে বা অন্যের দ্বারা মগজ-ধোলাই হয়ে মূলত গোটা মুসলিম সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন এবং একই সঙ্গে বিপদও ডেকে আনছেন। এদের বিষয়ে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মুসলিমদেরও সজাগ থাকা উচিৎ।
অগাস্ট ৫, ২০১৭