আন্তর্জাতিক নারী দিবস
৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। এ বছর কানাডায় বিশ্ব নারী দিবসের থিম হলো ‘Equality Matters’। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত কানাডায়ও নারীর প্রতি সম্মান জানিয়ে এবং তাদের সমঅধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পালিত হয় এই দিবসটি।
কানাডার ‘চার্টার অব রাইটস এন্ড ফ্রিডম’ এ নারী ও পুরুষের সম অধিকারের বিষয়টি সন্নিবেশিত করা আছে। আমরা জানি কানাডা বিশ্বের প্রথম কাতারের একটি দেশ যেখানে নারী অধিকারকে যথাযথভাবে সম্মান করা হয়। কিন্তু সমতার ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য আরো কিছু ক্ষেত্রে নারীরা এখনো পিছিয়ে আছেন পুুরুষের তুলনায়।
কানাডার সরকারী ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী আমরা দেখতে পাই অতি অল্প সংখ্যক নারী অর্থনৈতিক নেতৃত্বের দিকে এগুচ্ছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বোর্ড মেম্বার এর তালিকায় নারীদের উপস্থিতি কম। নারীদের উপস্থিতি কানাডার রাজনীতিতেও কম। হিসাবে দেখা যায়, ৪২তম পার্লামেন্টে নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে শতকরা ২৬ জন নারী। ২০১৫ সালে কানাডায় নির্বাচিত মিউনিসিপাল কাউন্সিলরদের মধ্যে ছিলেন শতকরা ২৮ জন নারী আর নির্বাচিত মেয়রদের মধ্যে ছিলেন শতকরা ১৮ জন নারী।
সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে কানাডীয় নারীদেরকে বেশী সময় ব্যয় করতে হয় পুরুষের তুলনায়। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে নারীরা গড়ে ৫০.১ ঘন্টা ব্যয় করেছেন সন্তান লালন-পালনে। অন্যদিকে পুরুষরা ব্যয় করেছেন ২৪.৪ ঘন্টা।
ঐ একই সালে পরিবারের বয়স্কদের সেবা যতেœ পুরুষের তুলনায় নারীরা সময় ব্যয় করেছেন বেশী। অনুপাতটা ৪৯%Ñ২৫%। গৃহস্থালি কাজেও কানাডীয় নারীদের সময় বেশী ব্যয় করতে হয়েছে পুরুষের তুলনায়। নারীরা সপ্তাহে সময় ব্যয় করেছেন ১৩.৮ ঘন্টা। পুরুষেরা ব্যয় করেছেন ৮.৩ ঘন্টা। কর্মক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের তুলনায় কম বেতন পান একই কাজ করে। প্রায় ২৭% কম। নারীরা উচ্চ মাত্রায় লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতারও শিকার হচ্ছেন।
কানাডায় নারী অধিকার, নারী-পুরষের সমতা ও নারী স্বাধীনতা বিষয়ে এটি একটি সার্বিক চিত্র। কিন্তু কানাডায় অবস্থানরত বাংলাদেশী নারীদের বেলায় এর চিত্রটি কি?
এ বিষয়ে অবশ্য কোন জরীপ বা গবেষণা কখনো চালানো হয়নি কানাডায়। তবে সাধারণভাবে আমরা যা লক্ষ্য করি তাতে বলা যেতে পারে যে, বাংলাদেশী মহিলাদের অবস্থাও অন্যান্য কানাডিয়ান মহিলাদের মত কম-বেশী একই রকম।
আমরা জানি এখানে নারীদের অধিকার ও স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেয়া আছে সংবিধানে। বাংলাদেশে যেমন নারীদেরকে অবমাননা করা, নির্যাতন করা অপেক্ষাকৃত সহজ এখানে সেরকমভাবে সহজ নয়। তাছাড়া কানাডায় বাংলাদেশ থেকে যে সকল পরিবার আসেন তাদের বেশীরভাগই উচ্চ শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত ও প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার লোক। সে কারণেও বাংলাদেশী কমিউনিটিতে নারী নির্যাতনের হার বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আমরা প্রবাসী কণ্ঠ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে কানাডায় বাংলাদেশী নারীরা কতটা স্বাধীনতা, অধিকার ও নিরাপত্তা উপভোগ করছেন সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছি চলতি সংখ্যায়। তাতে দেখা গেছে, কতিপয় ঘটনা ও দুর্ঘটনার কথা বাদ দিলে কানাডায় বাংলাদেশের নারীরা বাংলাদেশের তুলনায় সামাজিক ও পারিবারিকভাবে অনেক বেশী অধিকার ও স্বাধীনতা উপভোগ করছেন। আর এ কথা স্বীকারও করেছেন প্রবাসী কণ্ঠের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এখানকার কয়েকজন বাংলাদেশী নারী।
আমাদের প্রশ্ন ছিল, কানাডায় প্রবাসী বাংলাদেশী নারীরা কতটা অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করছেন? পাশাপাশি নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, পোষাকের স্বাধীনতা, পরিবারের কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ে কতটা সুবিধা ভোগ করছেন তারা? কানাডার সামাজ ব্যবস্থায় বাস করার সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশের তুলনায় তারা কতটা সুখী?
উত্তরে তারা সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন কানাডায় তারা শতভাগ স্বাধীনতা উপভোগ করছেন। তাদের অধিকার এখানে শতভাগ সুরক্ষিত। তারা এখানে অনেক সুখে আছেন। সুখের মাত্রা কারো কারো ক্ষেত্রে শতভাগের চেয়েও বেশী।
নিজেদের সম্মান, আত্মমর্যাদা, সম্ভ্রম ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশী নারীদের বেঁচে থাকার এই যে পরিপূর্ণ সুযোগ এর মূল্যতো অপরিসীম। একজন বাংলাদেশী নারী সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “কানাডায় নিজেকে সুখী বা ভাগ্যবান মনে না করার কোন কারণ আমি খুঁজে পাই না।”
তবে কানাডায় নারী পুরুষের সমতা এখনো পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি যা দিনের আলোর মতই সত্যি। কিন্তু ক্রমশ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটছে তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা গত জাতীয় নির্বাচনের পর দেখেছি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার মন্ত্রী পরিষদে অর্ধেক সদস্যই নিয়োগ করেছেন নারী এমপিদের মধ্য থেকে। সন্দেহ নেই সমাজ ও দেশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় মাপের পদক্ষেপ। তবে পুরুষের মনমানসিকতায় আগামীতে আরো পরিবর্তন আনতে হবে নারীর সম অধিকার প্রতিষ্ঠায়।
মার্চ ১১, ২০১৭