হিজাব ও নিকাবের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতার স্থান যা আমাদের উদ্বেগের কারণ
॥ জোনাথন কে ॥
নেকাব কিন্তু হিজাবের মত বস্ত্রখণ্ডমাত্র নয়। নেকাব মুসলিম নারীর পুরো অবয়ব ঢেকে ফেলে। অথচ আমরা যখন মানুষের সঙ্গে কথা বলি তখন কতগুলি সামাজিক ইঙ্গিতের ওপর আমরা নির্ভর করি, যেমন: তার হাসি, তার ভ্রুভঙ্গি, ভ্রুর ওঠানামা এবং এরকম আরও অনেক কিছু। নেকাব এসব ঢেকে ফেলে।
সাংবাদিকতার কুটির শিল্পে মুসলিম পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে কানাডা হতে পারে সারা বিশ্বে অগ্রণী। সাত বছর আগে, হাফিংটন পোস্ট-এর একজন সম্পাদক এক সপ্তাহ ধরে বোরকা পরেন এবং এ নিয়ে ‘বোরকায় কি আমাকে মোটা দেখায়?’ শিরোনামে হাসির নাটক মঞ্চায়নের প্রয়াস পান। গত বছর কুইবেকের জনপ্রিয় হটহেড (অল্পে রেগে যাওয়া ব্যক্তি?) রিচার্ড মার্টিনিউ তার ফরাসী ভাষার বক্তৃতামালা ‘‘ফ্র্যাঞ্চেমেন্ট মার্টিনিউ’’তে বোরকা পরে হাজির হন। তিনি সান পত্রিকার সংবাদ-ব্যক্তিত্ব এজরা লেভেন্ট-এর অনুকরণে একাজ করেন। এজরা লেভেন্ট বোরকা পরে এক বা দুই মিনিটের মধ্যে তা টেনে খুলে ফেলেন এবং একে ‘‘ভয়ানক আরামহীন’’(নষড়ড়ফু ঁহপড়সভড়ৎঃধনষব) পোশাক বলে মন্তব্য করেন। সান পত্রিকায় তার আরেক সহকর্মী ডেভিড ‘‘দ্য মেনজোইড’’ মেনজিস ১৪ বছর বয়সের একটি শিশুর গায়ে বোরকা চাপিয়ে দেন এবং তাকে দিয়ে অন্টারিওর একটি মদের দোকান থেকে ২৪ আউন্স মদ কেনার দৃশ্যের ভিডিও ছবি তোলেন।
এ ধরণের সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে কুইন্সের জার্নাল-এর কপি এডিটর আনিসা রাওহানির দিক থেকে। রাওহানি একজন অমুসলিম তরুণী। তিনি ১৮ দিন ধরে হিজাব পরেন (হিজাব হলো একখণ্ড বস্ত্র যা দিয়ে মুসলিম নারীরা মাথা ও বুক আবৃত করেন কিন্তু মুখমণ্ডলের বেশিটাই অনাবৃত রাখা হয়) শুধু এটি দেখার জন্য যে এতে মানুষ কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। রাওহানির এই কাজটি আগে উল্লেখিত স্টান্টবাজির মত ছিলো না বরং তিনি সত্যিকারের সমাজতাত্ত্বিক অনুসন্ধিৎসা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই একাজ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়।
কুইন্স ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস এবং এর আশেপাশের এলাকা অন্টারিওর কিংস্টোন-এর পরিবেশ হলো এমন যে সেটি সুশিক্ষিত উদারপন্থীদের দিয়ে পূর্ণ। রাওহানি পরে বলেছেন, ‘‘আমার ধারণা ছিলো যে হিজাব পরার কারণে আমি জাতিগত নিন্দাবাদ, মন্দ আচরণের হুমকির শিকারে পরিণত হবো না।’’ আর সত্যিই তিনি এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েননি। বরং এর বিপরীতটাই ঘটেছে : তার ভাষায়, ‘‘লোকেরা ছিলো চমৎকার। অনেক বেশি চমৎকার।’’
তিনি লিখেছেন, ‘‘সবার আগে আমি ভেবেছিলাম আমি নিছক কিছু বিষয় কল্পনা করছিমাত্র। কী এসে যায় যদি রাস্তায় অপরিচিত লোকেরা আমাকে দেখে হাসাহাসি করে? কিন্তু যখন আমি অনুধাবন করলাম যে, বন্ধু এবং অপরিচিতদের কাছ থেকে একইভাবে স্বাভাবিক মেলামেশার চাইতেও বেশি বন্ধুসুলভ আচরণ পাচ্ছি Ñ আপনি আমার বিস্ময়টা অনুমান করতে পারবেন। এটি কোনভাবেই সম্পূর্ণ নতুন কাহিনী নয় বরং খুবই সাধারণ ঘটনা। আমি এমন ঘটনার মুখোমুখি হতে থাকি যেখানে আমার সঙ্গে অন্যদের চেয়ে চোখে পড়ার মত সম্পূর্ণ আলাদাভাবে ব্যবহার করা হয়।’’ তিনি একটি স্বল্পমূল্যের পিজার দোকানের উদাহরণ তুলে ধরেন। ‘‘সেখানে ক্যাশে বসা লোকটি সে সময় খুব ভালো মেজাজে ছিলো না।’’ রাওহানির বন্ধু যখন তার কাছে সসেজ জাতীয় জিনিস চাইলো তখন লোকটি হেলাফেলার সঙ্গে আচরণ করলো কিন্তু হিজাব পরা রাওহানিকে একই জিনিস দেয়ার সময় লোকটি মুখ ভরা হাসি নিয়ে তা সরবরাহ করে।
এই পরীক্ষার সময় একমাত্র যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে সেটি হলো ক্লাশে নাম ডাকার সময় হাত তুলতে গিয়ে। কারণ শিক্ষক তাকে হিজাব ব্যবহারকারী অন্য একটি মেয়ের নাম ধরে ডাকতে থাকেন যে মেয়েটি সে সময় ক্লাশে উপস্থিত ছিলো না। পরে ওই শিক্ষক তার ভুলের জন্য অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করেন। রাওহানিকে ধন্যবাদ তিনি এই ঘটনাটি কথাপ্রসঙ্গে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এটিকে চরম বর্ণবাদের সূচক হিসাবে গ্রহণ করেননি।
সামিরা কাঞ্জি ও আজিজাহ কাঞ্জি – নেকাবের পক্ষে:
জ বনাম ঘ.ঝ -এর মামলায় (আদালতে সাক্ষ্যদানের সময় একজন নারী নেকাব পরতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে) হাইকোর্টের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত কানাডায় নেকাব সম্পর্কে আমরা যেভাবে কথা বলি সেক্ষেত্রে একটি সময়োচিত ও অতিপ্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা।
নেকাব প্রায়শ সহজাত (ৎবভষবীরাব), সাধারণ বিচার-বুদ্ধিসঞ্জাত (ারংপবৎধষ) অপছন্দের অনুভূতি জাগিয়ে তোলেÑ এমনকি বিরক্তি জাগায়Ñ বিশেষ করে তাদের দিক থেকে যারা এটিকে ইসলামে নারীদের নিবর্তন ও অবমাননাকর অবস্থায় ফেলে রাখার সুনিশ্চিত প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করেন। আদালতের সিদ্ধান্ত থেকে তুলে আনা পর্যাপ্ত মন্তব্য এই নিবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে এবং তা থেকে কিছু বিচিত্র উদাহরণ পাওয়া গেছে। ডেভিড ফ্রাম জোর দিয়ে বলেন, ‘‘নারীকে অধীনস্থ করে রাখে বা হীন হিসাবে প্রতীয়মান করে এমন যে কোন আইনকানুনকে কানাডীয়রা সাধারণভাবে অবিশ্বাসের চোখে দেখে…… নারীকে আবৃত করে রাখার অর্থ হলো এটা মেনে নেয়া যে নারী হলো সবদিকে থেকে একটি যৌনতার বিষয় এবং যে কোন ধরণের যৌন দুর্ব্যবহার থেকে রক্ষার জন্য নারীর ওপর সব রকমের বোঝা ও দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।’’ ক্রিস সেলি নেকাবকে ‘‘বোধের অগম্য এক ধর্মীয় রীতি’’ হিসাবে বর্ণনা করেন। বারবারা ক্লে দাবি করেন যে, ‘‘নেকাব হলো নারীকে জিম্মি করে ফেলার প্রতীক (ফযরসসরঃঁফব)…নেকাব হলো আমাদের চেতনা বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দেয়া।’’
আরও পড়–ন…
রাওহানি হিজাব পড়ার পর তার প্রতি চরম ইসলাম-ভীতি থেকে সঞ্জাত আচরণ না করে কেন মানুষ অনুকূল আচরণ করলো সেটির ব্যাখ্যা কী? রাওহানি এই প্রশ্নটি করেছিলেন কুইন্সের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক লিন্ডার ফেব্রিগারের কাছে। লিন্ডার ফেব্রিগার মানুষের আচরণ ও মনোভঙ্গী বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তিনি বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেন এক ধরণের ‘‘প্রভাবিতকরণের ব্যবস্থাপনা’’ হিসাবে : বেশিরভাগ লোকই অনুধাবন করেন যে আমরা অন্ধবিশ্বাসী হতে পারি, কিন্তু আমাদের যৌক্তিক মন আমাদের বলে যে গোঁড়ামিপূর্ণ বিশ্বাস সঠিক নয়। সুতরাং আমরা ‘‘একধরণের অতিরিক্ত সংশোধন প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়ি যা ভাগ্যের পরিহাসে আমাদেরকে অন্যদের চেয়ে সংখ্যালঘুর প্রতি অধিকতর বন্ধুসুলভ আচরণ করতে উদ্বুদ্ধ করে।’’
এটি যুক্তিসঙ্গতভাবেই সম্ভব বলে আমার কাছে মনে হয় যেমনটা রাওহানির নিজস্ব সমাজতাত্ত্বিক জল্পনা-কল্পনার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সত্য বলে মনে হয়েছে। তারপরও এই ঘটনা আমাকে খানিকটা বিস্ময়ের মধ্যেই ফেলে রেখেছে যে, লেখকের (রাওহানির) পরীক্ষার প্রকৃতি কী তাকে রক্ষণশীল মুসলিমদের ব্যাপারে উদার কানাডীয়দের মনে যে এই প্রকৃত উদ্বেগ রয়েছে সেই বিষয়টিকে চাপা দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে? হিজাবের প্রশ্ন থাকুক, রাওহানি দৃশ্যত তার নিজের বিশ্বের কাছেই নিজেকে উপস্থাপন করেছে একজন আধুনিক, আত্মবিশ্বাসী, অত্যন্ত নিষ্ঠাবান, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট তরুণী হিসাবে যে কলেজে যায়, সপ্তাহান্তে বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে বেড়াতে যায় এবং একটি শিক্ষার্থীদের সংবাদপত্রে কাজ করে। এটিই যদি বিশ্বের সঙ্গে আপনার পারস্পরিক মেলামেশার উপায় হয় তাহলে মাথায় পরার একটি স্কার্ফ (হিজাব) কী পার্থক্য সৃষ্টি করবে?
রাওহানির পিজার দোকানের উদাহরণ আমার মনে ছিলো। গত সপ্তাহান্তে মনিট্রয়লের মেইসোনিউভ বুলেভার্ডে এঞ্জেলাস পিজারিয়াতে আমাকে ঘটনাচক্রে অনেক রাতে খাবার খেতে যেতে হয়েছিলো। হঠাৎ একদল হিজাব পরা মেয়ে ভেতরে এলো। তারা নানা ধরণের ফ্রাই এবং ভেজিটেবল পাই খেতে খেতে আরবীতে কথা বলছিলো। (এই এলাকাটিতে গত কয়েক দশক ধরে তরুণ আরবীয়দের বড়সড় গোষ্ঠী বসবাস করছে) সব টিনএজাররাই যেমনটা করে তারা ঠিক তেমনই পরস্পরের সঙ্গে এমনভাবে অনর্গল কথা বলছিলো যা অন্য কারও পক্ষে তা বোঝা সম্ভব নয়। ২০ বছরের বেশি বয়সের কাউকে তারা মোটেই ভ্রƒক্ষেপ করছিলো না। সারা বিশ্বের কাছে তারা নিজেদেরকে এমনভাবে উপস্থাপন করছিলো যেন তারা যথার্থই ফ্রেঞ্চ-কানাডিয়ান, অ্যাংলো, বা ইহুদি, বা গ্রিক কিংবা ইটালিয়ান। হিজাব কোনকিছুকেই পাল্টে দেয়নি।
বিষয়টি তখনই জটিল হয়ে ওঠে যখন একজন মহিলা হিজাবের পরিবর্তে তার পুরো মুখমণ্ডল নেকাব দিয়ে ঢেকে ফেলেন অথবা বোরকা দিয়ে শারা শরীর এবং মুখমণ্ডল ঢেকে ফেলেন। কানাডার অনেক বড় শহরে আপনি এধরণের সর্বাঙ্গ আবৃত করা কিছু মহিলাকে দেখতে পাবেন। তবে তারা (আমার পর্যবেক্ষণে) কখনই পিজার দোকানে খুব বেশি সমাদর পান না। তার পরিবর্তে তারা বরং সাবওয়ে ধরে একটি বাচ্চা নিয়ে নিরবে হেঁটে চলে যান অথবা কোন বাণিজ্য কলেজের ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসে নোট নিতে ব্যস্ত থাকেন।
একথা বলাটা ঠিক হবে না যে, নেকাব হলো একটি সামাজিক মৃত্যুদণ্ডের সামিল। টরন্টোর ওভেরলিয়া বুলেভার্ড ধরে এখানকার ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের বসবাসসমৃদ্ধ এলাকা বাণিজ্যিক কেন্দ্র থর্নক্লিফ পার্ক মহল্লায় গেলে দেখা যাবে বোরকা পরা মহিলারা দল বেঁধে চলেছেন, পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছেন, ইস্ট ইয়র্ক টাউন সেন্টারে কেনাকাটা করছেন অথবা বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দিচ্ছেন। কিন্তু সামাজিকভাবে তারা খুবই সীমাবদ্ধ অবস্থায় থাকেন। মুখ ঢেকে রাখার ফলে অন্যরা একটিই বার্তা পায় আর তা হলো, চারপাশের বিশ্বকে তারা এমনভাবে দেখেন যেন সেটি যৌন বাসনাপূর্ণ পুরুষে এবং অন্যান্য ইতর সামাজিক দূষণে পরিপূর্ণ যার বিরুদ্ধে তাদেরকে অবশ্যই শরীরের প্রতিটি ইঞ্চির সুরক্ষা দিতে হবেÑ শুধু চোখ দু’টি ছাড়া যাতে অন্তত এটুকু নিশ্চিত হয় যে তারা গাড়ি বা ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে ধাক্কা খাবে না।
ইসলামী মৌলবাদীরা দাবি করেন যে, নেকাব পরা মহিলারা তাদের স্বাধীন ইচ্ছায় সেটা পরেন, স্বামীর হাতে মার খাওয়ার ভয়ে নয়। কিন্তু যদি সেটা হয়েও থাকে তবুও তাদের ‘স্বাধীন ইচ্ছা’ নিঃসন্দেহে সমাজে নারীর অবস্থান সম্পর্কে একটি অবিশ্বাসপূর্ণ ও অতিমাত্রায় পশ্চাদমুখি বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে গঠিত। আর এটা নিশ্চিতভাবেই বোধগম্য এবং সেটি ইসলামভীতি থেকে নয়Ñ যে সাধারণ কানাডীয়রা (ল্যাভেন্ট, মার্টিনিউ এবং দি মেনজোইডসহ) এর মাধ্যমে চুপচাপ দূরে সরে যাবে।
নেকাব পরার জন্য ১৮দিন হবে অনেক দীর্ঘ সময়। কিন্তু রাওহানি যদি তার পরীক্ষাটা আবারও করতে প্রস্তুত থাকে তাহলে আমি তার পরীক্ষার ফলাফল জানতে খুবই আগ্রহীÑ তবে এবার শুধু মাথায় স্কার্ফ পরে নয় পুরো মুখমণ্ডল আবৃত করে সেটা করতে হবে।
আমার অনুমান, সে আবারও দেখতে পাবে যে, লোকেরা তার প্রতি নিখুঁতভাবে সামাজিক আচরণ করছে। কিন্তু আমার সন্দেহ, এই বন্ধুসুলভ আচরণের পেছনে রয়েছে অনেক বেশি উদ্বেগের জায়গা।
নেকাবের একটি প্রভাব এই যে, মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় আমরা যেসব অনানুষ্ঠানিক সামাজিক ইঙ্গিতগুলোর ওপর নির্ভর করি এটি সেগুলোকে ঢেকে ফেলে। মানুষের হাসি, ভ্রুভঙ্গি, ভ্রƒর ওঠানামা ইত্যাদি দেখেই আমরা বুঝতে পারি আমাদের বলা কৌতুকটি সত্যিই মজার কিনা, আমাদের বলা গল্প ভাল লাগলো কি মন্দ, আমাদের উপস্থিতিকে স্বাগত জানানো হচ্ছে কি হচ্ছে না। যারা বোরকা পরে না তাদের প্রতি বোরকার ইঙ্গিত হলো যতদূর সম্ভব নেতিবাচক। এই রকম একটি পরিস্থিতিতে বোরকা না পরাদের মধ্যে বেশিরভাগই হয়তো মুখে এমন একধরণের নার্ভাস হাসি ঝুলিয়ে রাখবো, ক্ষতিকর নয় এমন কিছু বলবো এবং সম্ভব দ্রুততম সময়ে অন্য কোন সামাজিক বা বাণিজ্যিক যোগাযোগ খুঁজে নেবো যাতে করে কোনরকম যৌন হুমকি সৃষ্টির কারণ হতে না হয়। নেকাবের উপস্থিতির অব্যক্ত ইঙ্গিত হলো এটিই এবং তা আমাদের সবার ওপর কিঞ্চিত অবদমন আরোপ করে।
৯/১১এর পর পাশ্চাত্যের প্রতিটি সমাজ মুসলিম নারীদের পোশাকের ব্যাপারে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। (কুইবেকের একাংশে এটি তো চরম বিস্ফোরনোন্মুখ সঙ্কটের রূপ নিয়েছে।) কিন্তু রাওহানি বিষয়টিকে বুঝতে ভুল করবেন যদি তিনি এটিকে কেবলই হিজাবের সমস্যা হিসাবে দেখেন। এটি আমাদের মৌলিক এবং সামাজিকভাবে অনুভূত মানবিক চাহিদা যে কারো সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদানের সময় তার মুখ দেখতে পাবো। ঘটনা এই যে, যারা মুখোশের আড়ালে অবস্থান করে আমরা তাদের নম্রভাবে সহ্য করি, আর এটিই কানাডীয় সৌজন্যবোধের প্রকাশ। কিন্তু এর অর্থ কোনভাবেই এই নয় যে, উল্লেখিত পোশাকের চর্চা কোনভাবেই স্বাভাবিক বা প্রত্যাশিত।
April 28, 2014
-সৌজন্যে : ন্যাশনাল পোস্ট