স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে আর বাবা মাকে ‘স্পন্সর’ করা সম্ভব হবেনা
প্রবাসী কন্ঠ রিপোর্ট , ফেব্রুয়ারী ৫, ২০১৪॥ কানাডার নতুন ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী এখন থেকে স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে বাবা মাকে আর ‘স্পন্সর’ করা সম্ভব হবেনা। কানাডার ইমিগ্রেশন সূত্রে এ কথা জানা গেছে। বছরের শুরুতে কানাডা এই কর্মসূচীতে ৫ হাজার নতুন ইমিগ্র্যান্ট আনার ঘোষণা দিলেও আবেদনের জন্যে যে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে তাতে স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে অংশ গ্রহণ দুরুহ হয়ে ওঠেছে। একদিকে যেমন স্পন্সরের জন্যে আবেদনকারীর আয় আগের তুলনায় শতকরা ৩০ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে তেমনি আগে যেমন ছিল যারা এই কর্মসূচিতে আসবেন তারা দশ বছর কোন ‘সোসাল এসিস্ট্যান্ট’ পাবেন না সেই সময় সীমা বর্তমানে বিশ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া আবেদনের সময় একমাত্র রেভিনিউ কানাডার এসেসমেন্টই গ্রহণ করা হবে। তিন বছরের ধারাবাহিক আয়ের এসেসমেন্ট জমা দিতে হবে। কানাডার ইমিগ্রেশন এখন শুধু মাত্র অর্থনীতিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এখানে পরিবারের সম্মিলন এখন আর গুরুত্ব পাচ্ছেনা। অটোয়া মনে করে- স্পন্সরশীপ কর্মসূচীতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা এসে হেলথ কেয়ার, হাউজিং ভর্তুকি ও সোসাল নিয়ে কানাডার অর্থনীতিতে একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ‘অন্টারিও কাউন্সিল ফর এজেন্সিস সার্ভিং ইমিগ্র্যান্টস’-এর মতে, সরকারের এই তথ্যের কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। স্পন্সরকৃত মাতা পিতা কিংবা তাদের ‘গ্র্যান্ড প্যারেন্ট’রা তাদের আয়ের উপর ভিত্তি করেই সামান্য পেনশন পান। আর যারা সোসাল পান সেটা তো নির্দিষ্ট সময় সীমা অতিক্রম করার পরই। তারা মূলতঃ সরকারের সুযোগ সুবিধে ভোগ করার জন্যে এখানে আসেন না। অধিকাংশই আসেন তাদের নাতি নাতনিদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্যেই।
স্পন্সরশীপের আওতায় আসা ইমিগ্র্যান্টদের ব্যাপারে সরকার যে অর্থনীতির চাপের কথা বলেন-সেটাও সত্য নয়। ইমিগ্র্যান্টরা তাদের বাবা মাকে ভরণ পোষণ করার জন্যে যদি নিয়মিত অর্থ প্রেরণ করে সেটা তো রিমিট্যান্স-এর পর্যায়েই পড়ে। কিন্তু যখন বাবা মা-রা এখানে সন্তানদের সঙ্গে স্থায়ী ভাবে বাস করার জন্যে আসেন তখন তারা সঙ্গে নিয়ে আসেন তাদের জীবনের সঞ্চিত অর্থও-যা তারা এখানকার অর্থনীতিতে লগ্নি করেন। ২০০৯ সালে ডল হাউজ-এর গবেষণায় জানা যায়, এই ক্যাটাগরীতে আসা শতকরা ৪০ ভাগের মধ্যে ৩০ ভাগই বেবী সিটিং-এর সঙ্গে নিজেদেরকে যুক্ত করেন। সর্বোপরি বাবা মাকে ছেড়ে এ দেশে এসে তাদের অনেক সন্তানই মানসিকভাবে খুব দুর্বল হয়ে পড়েন। এটা শুধু অর্থনৈতিক বিবেচনায় দেখলে হবেনা। এর মানবিক দিকটাও খাঁটো করে দেখার উপায় নেই। যেমন চায়নিজ ইমিগ্র্যান্টদের কথাই ধরা যাক। সেখানে ‘ওয়ান চাইল্ড পলিসি’র কারণে সন্তান দেখা শোনা করার কেউ থাকেনা। সেই পরিবারটি যখন কানাডায় আসে এবং যখন কাজে যায় তখন তাদের সন্তানদের দেখা শোনা কে করবে। তারা তাদের বাবা মাকে নিয়ে এলে তারা অতি সহজেই এখানে কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে । এতে দেশের অর্থনীতিই সমৃদ্ধ হয়। স্পন্সরশীপ প্রোগ্রাম থেকে স্বল্প আয়ের মানুষদেরকে ক্রমশঃ দূরে ঠেলে দিয়ে প্রকারন্তরে তাদেরকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করা হচ্ছে।
টরন্টোর সাউথ এশিয়ান লিগ্যাল ক্লিনিকের দীপা মাট্টো বলেন, এমন কি ‘সুপার ভিসা’ প্রোগ্রাম থেকেও এদেরকে হঁটিয়ে দেয়া হচ্ছে। নিয়ম করা হয়েছে-সুপার ভিসায় আবেদন কারীর পরিবারকে দশ বছরের সময়কালের মধ্যে অন্তত কয়েকবার এখানে এসে ঘুরে যাওয়ার পারমিট দেয়া হয়। সেটাও কি স্বল্প আয়ের মানুষদের পক্ষে সম্ভব?