ভবিষ্যতের বাধা এড়ানোর জন্য স্থায়ী বাসিন্দাদের এখনই কানাডীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার আহবান
বসবাসের শর্ত চার বছর করা এবং নাগরিকত্বের পরীক্ষার জন্য বয়সের ক্ষেত্রে ৬৫ বছর পর্যন্ত ছাড় দেয়ার মত কিছু পদক্ষেপ আরও এক বছরের মধ্যে কার্যকর হচ্ছে না
নিকোলাস কেউং , সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৪ : কর্মজীবী মানুষের মহল্লা রেক্সডেল-এর বাসিন্দারা ধীরে ধীরে একটি কমিউনিটি সেন্টারে সমবেত হচ্ছেন। অনেকের সঙ্গেই ইংরেজিভাষী টিনএজ শিশু কিংবা স্ট্রোলারে রাখা শিশু রয়েছে। এসব ভবিষ্যৎ নাগরিকদের প্রত্যেককেই উদ্বিগ্ন ও দ্বিধাগ্রস্ত দেখাচ্ছিলো।
কমিউনিটির আইন বিষয়ক কর্মী আইতাজ আলিয়েভা ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘আপনাদের মধ্যে কতজন নতুন নাগরিকত্ব আইন, বিল সি-২৪ সম্পর্কে শুনেছেন?’’ তার প্রশ্নে লোকেরা শুন্য দৃষ্টিতে নিরবে তাকায়। এরই মধ্যে একজন সেটেলমেন্ট কর্মী প্রশ্নটি আরবিতে অনুবাদ করে দিলে চারপাশে অন্যান্য ভাষায় কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়।
‘‘আমরা এখানে এসেছি নাগরিকত্ব আইনে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং যেগুলি শিগগিরই কার্যকর হবে সে সম্পর্কে কথা বলতে। আমরা আপনাদের পরামর্শ দিচ্ছি, আপনি যদি এরই মধ্যে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের যোগ্য হয়ে থাকেন তাহলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব আবেদন করুন।’’
নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এই ফ্রি ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছে রেক্সডেল কমিউনিটি লিগ্যাল ক্লিনিক। কানাডাজুড়ে লিগ্যাল ক্লিনিকগুলো অভিবাসীদের কাছে নাগরিকত্ব আইনের সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহ এবং তার প্রভাব কী হবে তা ব্যাখ্যা করার জন্য এধরণের অসংখ্য কর্মশালার আয়োজন করছে।
গত জুন মাসে অটোয়া সরকার যখন নতুন আইন অনুমোদন করে তখন অভিবাসন বিষয়ক সেটেলমেন্ট ওয়ার্কাররাসহ অনেকেই মনে করেছিলেন যে আইনটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে এবং এর প্রতিবন্ধকতামূলক প্রভাব এড়ানোর তেমন কোন উপায় থাকবে না।
বস্তুত আইনের সবচেয়ে বিতর্কিত কিছু পদক্ষেপ যেমন নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীকে ছয় বছর কানাডায় অবস্থানের মধ্যে চার বছর টানা বাসবাসের শর্ত (আগে যেখানে চার বছরের মধ্যে তিন বছর টানা বসবাসের শর্ত ছিলো) এবং ভাষা ও নাগরিকত্বের পরীক্ষায় ছাড় দেয়ার বয়স ৫৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর করার মত বিধানগুলি আগামী বছরের জুনের আগে কার্যকর হচ্ছে না। অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা স্টারকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রেক্সডেল লিগ্যাল ক্লিনিকের নির্বাহী পরিচালক এবং ইন্টার-ক্লিনিক ইমিগ্রেশন ওয়ার্কি গ্রুপের সদস্য অ্যান ম্যাকরে বলেন, ‘‘আমরা জনগণকে বলতে চাই যে, এখনও খুব বেশি দেরি হয়ে যায়নি এবং তাদের উচিৎ পুরনো আইনের সুবিধাগুলি গ্রহণ করা।’’ অন্টারিওর দক্ষিণ এশীয় লিগ্যাল ক্লিনিকের কর্মচারীরা বিভিন্ন কমিউনিটির লোকজনের জন্য কর্মশালার আয়োজন করছেন এবং নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে লোকেদের সাহায্য করছেন।
ক্লিনিকের আইনজীবী করিম বাকী বলেন, ‘‘সবগুলো পরিবর্তন এত দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে যে লোকেরা সংশয়ের মধ্যে রয়েছে। আজ যিনি আবেদনের জন্য যোগ্য কাল হয়ত তিনি যোগ্য থাকবেন না। সেজন্যে আমাদেরকে আগেভাগেই কাজ সারতে হবে।’’
মেট্রো চাইনিজ অ্যান্ড সাউথইস্ট এশিয়ান ক্লিনিকের এভি গো বলেন, কম লেখাপড়া জানা এবং ভাষাগত দক্ষতা নেই এমন অভিবাসী এবং উদ্বাস্তুরা নতুন আইন কার্যকর হলে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়বেন। তারা এখন নাগরিকত্ব বিষয়ে একটি ক্লিনিক পরিচালনা করছেন যেখানে গত জুন থেকে এ পর্যন্ত ৭০ জনের বেশি লোক সহায়তা নিচ্ছে।
এভি গো বলেন, ‘‘অনেক লোক দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছেন। তাদের কর্মসংস্থান হয়েছে, পরিবার আছে এবং তারা কমিউনিটিতে বেশ ভালভাবেই একীভূত হয়েছেন কিন্তু তাদের বয়স ৫৫ বছর না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে কারণ তারা জানেন যে তাদের ভাষার ওপর দক্ষতা পরীক্ষায় পাশ করার মত নয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ না করলে তাদেরকে গত জুন থেকে শুরু করে পরবর্তী ১০ বছর ধরে অপেক্ষা করতে হবে পূর্ণ নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য। তারা যদি উদ্বাস্ত হয় তাহলে তারা কখনই পাসপোর্ট এবং ভ্রমণের সুবিধা পাবে না। সুতরাং অনেক কিছুই ঘটতে পারে এবং অপেক্ষার সময়ে লোকেরা তাদের পারমানেন্ট রেসিডেন্ট-এর মর্যাদা হারাতে পারে।’’ সৌজন্যে – Canadianimmigrant.ca