বিল সি-২৪ এখন আইনে পরিণত : কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া কঠিন কিন্তু হারানো সহজ

স্টভ মিউরেন্স, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৪ : বিল সি-২৪ নামে পরিচিত কানাডার নাগরিকত্ব কঠোরতর করার বিলটি রাজকীয় অনুমোদন লাভ করেছে এবং এখন এটি আইনে পরিণত হয়েছে। এতে কানাডায় নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে সে সম্পর্কিত কিছু সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি এখানে তুলে ধরা হলো।

কানাডার নাগরিকত্ব সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সংস্কারে বর্তমান সরকারের দৃঢ়প্রতীজ্ঞ হয়ে ওঠার ইতিহাস ২০০৬ সালের ইসরায়েল-লেবানন সংঘাতের সঙ্গে সম্পর্কিত। সে সময় প্রধানমন্ত্রী হারপার প্রায় ১১হাজার লেবাননী বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিককে লেবানন থেকে উদ্ধারের ঘটনা দেখেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই কখনওই কানাডায় বসবাস করেনি বলে অভিযোগ ছিলো এবং অনেকেই লেবানন থেকে উদ্ধার হওয়ার একমাসের মধ্যে আবার লেবাননে ফিরে যান। এই সময়েই ‘সুবিধাভোগী কানাডীয়’ (Canadians of Convenience) শব্দটির সৃষ্টি হয় এবং সরকার বিষয়টির একটি সুরাহা করার উদ্যোগ নেয়।

বিদেশে অভিবাসী প্রথম প্রজন্মের মানুষদের সীমাবদ্ধতা

২০০৯ সালে তৎকালীন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী জেসন কেনি কানাডার নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে ‘‘প্রথম প্রজন্মের সীমাবদ্ধতা’’র নীতি চালু করেন। ২০০৯ সালের এপ্রিলের পর থেকে কেবলমাত্র তাদেরই কানাডার নাগরিকত্ব দেয়া যেতো যারা বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছে কিন্তু তাদের বাবা-মা কানাডায় জন্মগ্রহণকারী বা কানাডার স্বাভাবিক নাগরিক (naturalized citizen)। কিন্তু ওই প্রথম প্রজন্মের কানাডীয় নাগরিকদের সন্তানরাও নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে এটা আর সম্ভব হবে না। আর এর পর তত্ত্বগতভাবে অসংখ্য প্রজন্মের জন্ম হয়েছে কানাডার বাইরে।

বিল সি-২৪-এ যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে

নাগরিকত্ব ও অভিবাসন বিষয়ক বর্তমান মন্ত্রী ক্রিস আলেকজান্ডার চলতি বছরেই বিল সি-২৪ প্রণয়ন করেন যাতে কানাডার নাগরিকত্বের আইন-কানুন ব্যাপকভাবে সংস্কার করা হয়। এখন কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া কঠিনতর এবং হারানো খুব সহজ হবে।

কানাডার নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারী স্থায়ী অধিবাসীদেরকে আবেদনের সময় থেকে পেছনের ছয় বছরের মধ্যে চার বছর অব্যাহতভাবে কানাডায় অবস্থান করতে হবে এবং এই চার বছরের মধ্যে আবার প্রতি বছর অন্তত ১৮৩ দিন বা তার বেশি কানাডায় বসবাসের রেকর্ড থাকতে হবে। আগের নিয়মে স্থায়ী অধিবাসীদের জন্য আবেদনের সময় থেকে পেছনের চার বছরের মধ্যে তিন বছর কানাডায় অব্যাহত বসবাসের বিধান ছিলো। একই সঙ্গে বিপুল সংখ্যক বিদেশী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীর জন্য দুঃসংবাদ হলো এই যে, তাদের স্থায়ী অধিবাসীর মর্যাদা পাওয়ার আগ-পর্যন্ত যে সময় তারা কানাডায় অবস্থান করবে সেটি নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় চার বছরের শর্তের মধ্যে ধরা হবে না।

একই সঙ্গে বিল সি-২৪-এ এমন একটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে যে, নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীদের সবাইকে কানাডায় বসবাসের আগ্রহ আছে এটা প্রমাণ করতে হবে। এই বিধানের বাস্তব প্রতিক্রিয়া কী হবে সে বিষয়ে কানাডা সরকারের ব্যাখ্যায় অস্পষ্টতা থাকলেও এই বিধানটি নাগরিকত্বের আবেদনে ভুয়া উপস্থাপনার জন্য কারও নাগরিকত্ব হরণের সহজ সুযোগ রাখার সঙ্গে মিলে অনেকের মধ্যেই এমন আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে যে, এর ফলে বিল সি-২৪ দেশে এমন একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক শ্রেণীর জন্ম দেবে যারা বিদেশে কাজ করতে বা ভ্রমণে যেতেও ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে।

জন্মগতভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারের অবসান

কানাডার নাগরিকত্বের আইনে চূড়ান্ত পরিবর্তনটি হবে সবচেয়ে বিতর্কিত এবং সেটি এখনও চালু করার অপেক্ষায় রয়েছে। কেনি এবং আলেকজান্ডার উভয় মন্ত্রীই বিদ্যমান আইনের ব্যাপারে তাদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, যে আইনে বলা হয়েছে যে, কূটনীতিকের সন্তান না হলে কানাডায় জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেকেই এদেশের নাগরিক হবেন। উভয়েই এই নীতি সংশোধনের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছেন যদিও তারা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। আমার মতে, যদি বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকে তাহলে জন্মগতভাবে নাগরিকত্ব পাবার অধিকার বিলোপের বিষয়টি নিছক সময়ের ব্যাপার হবে।

কানাডীয় নাগরিকত্বের মূল্য

কানাডা সরকারের দিক থেকে দাবি করা হয় যে, এতসব পরিবর্তনের মূলে ছিলো কানাডার নাগরিকত্বের মূল্য জোরদার করা। এই দাবির সারবত্তা আমি একেবারেই বুঝতে পারি না, আর আমি এই যুক্তিও বুঝি না যে অল্পসংখ্যক লোক নাগরিকত্ব পেলেই কানাডার নাগরিকত্বের দাম বেড়ে যাবে। আমার মনে হয়, কানাডার নাগরিকত্বের মূল্য নির্ধারিত হয় আমাদের আপেক্ষিক অর্থনৈতিক, সামজিক ও রাজনৈতিক সমৃদ্ধির মাধ্যমে। কানাডীয়দের সংখ্যা হ্রাসের মাধ্যমে এটি নির্ধারিত হয় না।

-স্টিভেন মিউরেন্স হলেন ভ্যাঙ্কুভারের লারলি রোসেনবার্গ নামক প্রতিষ্ঠানের একজন অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী।

সৌজন্যে -canadianimmigrant.ca