কানাডার ‘জাস্ট ইন টাইম’ ইমিগ্রেশন পাঁচ বছরেও সাফল্যের মুখ দেখেনি

প্রবাসী কন্ঠ রিপোর্ট , ফেব্রুয়ারী ৫, ২০১৪॥ ফেডারেল স্কিল্ডড ওয়ার্কার্স-কর্মসূচীর আওতায় অটোয়া ‘জাস্ট ইন টাইম’ ইমিগ্রেশনের যে প্রকল্প হাতে নিয়েছিল, গত পাঁচ বছরেও তা সাফল্যের মুখ দেখেনি।

আবেদনের প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রীতার ফলে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে-সহসাই এর অবসান হবে এমনটি আর আশা করা যাচ্ছেনা। এর মূলে রয়েছে-২০০৮ সালে কনজারভেটিভ সরকার বাজেট বিলে লক্ষাধিক ‘স্কিল্ড’ ওয়ার্কার-এর আবেদন যে বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন-এখন বলা যায় তাদের জন্যে তা বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময় মন্ত্রণালয়ের থেকে এক নির্দেশে এই কর্মসূচীতে আবেদনকারীর যোগ্যতায় বাধ্যবাধকতা ছাড়াও শূধুমাত্র বিশেষ পেশায় আবেদনের ব্যাপারে বছরে নির্দিষ্ট সংখ্যক আবেদন কারীর আবেদন গ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল।

সেই সময়কার ইমিগ্রেশন মন্ত্রী মিঃ জেসন কেনি বলেছিলেন, স্কিল্ডড ওয়ার্কারদের আবেদনের প্রেক্ষিতে চাকরিদাতা সংস্থা ছয় থেকে বার মাসের মধ্যে যদি সিদ্ধান্ত নিতে পারে-ইমিগ্রেশন কানাডাও শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তাদেরকে দ্রুত কাজ করার অনুমতি দেবে।

কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে-২০১০ সাল থেকে অপেক্ষার সময়সীমা হচ্ছে: প্যারিস ও হংকং-এ ১৬মাস, সেনেগালে ৩২ মাস ও লস এঞ্জেলেসে ৩১ মাস। আর ২০০৮ সাল থেকে যারা অপেক্ষায় আছেন তাদের সময়সীমা আরও দীর্ঘতরও। মরক্কোতে ৬২ মাস, তুরস্ক, কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, ভারত ও জ্যামাইকার জন্যে ৯৭ মাস। ইউরোপীয় আবেদনকারীদের অবস্থাও তথবৈচ। পোলান্ড ৮৯ মাস, লন্ডন ৮৭ মাস এবং প্যারিস ও ভিয়েনা ৭৪ মাস। উল্লেখ্য কানাডীয় দূতাবাস এসব অঞ্চল থেকে আবেদন প্রসেস করে থাকে।

এতো সব ব্যর্থতার মাঝেও অটোয়া আবার পরিকল্পনা করছে ‘এক্সপ্রেসন অব ইন্টারেস্ট’ বা ই ও আই কর্মসূচরি আওতায় চাকরিদাতাকে স্কিল্ডড ওয়ার্কার বাছাই করতে। এই মর্মে সরকার একটি বিলও উত্থাপন করতে যাচ্ছে। সমালোচকদের ধারণা এই কর্মসূচীতে সরকার আবার নতুন করে ‘ব্যাকলগে’র সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। জানা গেছে, এই সামারে শীর্ষ ১০ টি প্রসেসিং শাখার থেকে বাছাইকৃত ২৩ হাজার আট’শ সতেরোজন স্কিল্ডড ওয়ার্কার ইমিগ্রেশন কানাডার চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু মাত্র তালিকায় পাওয়া গেছে মাত্র ১,২৩৩ জনের নাম।

সিটিজেনশিপ ও ইমিগ্রেশনের মুখপাত্র সোনিয়া লিসেজ জানিয়েছেন, ফেডারেল স্কিল্ড ওয়াকার্স কর্মসূচীর আওতায় এ যাবত ৬লক্ষ ৪০ হাজার আবেদনকারীর আবেদন ঝুলে আছে। দ্রুত এই ব্যাকলগের অবসান না হলে গত সাত বছরের অপেক্ষমান সময়ের অতিরিক্ত সময়ে শিগগিরই এই সংখ্যা ৮ লাখে এসে দাঁড়াবে।

কানাডার শ্রম বাজারের চাহিদা দ্রুততম সময়ে পূরণ করার লক্ষে  ফেডারেল স্কিল্ড ওয়ার্কাস কর্মসূচী আরও বেগবান করার লক্ষে ‘জাস্ট ইন টাইম’ চালু করে ইমিগ্রেশন কানাডা আবার নতুন করে ব্যাকলগেরই জন্ম দিয়েছে।

মস্কোর ২৭ বছর বয়সী টেলি কমিউনিকেশন ম্যানেজার মারিয়া বলেন, ২০১২ সালের অগাস্টে আমি যখন এই কর্মসূচীর আওতায় আবেদন করি তখন অপেক্ষার সময় ছিল মাত্র ১৫ মাস। এখন তা দাঁড়িয়েছে ২৫ মাসে। তিনি বলেন, আমাদের মতো তরুণ ইমিগ্র্যান্টদের কাছে প্রতি বছরই সমান মূল্যবান। আমাদের ক্যারিয়ার  আমাদের জীবন নিয়ে  এক ধরণের পরিকল্পনা আছে। কিন্তু যেভাবে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে-তাতে তো মনে হয়, আমরা ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছি। কানাডা বার এসোসিয়েশনের ইমিগ্রেশন শাখার সভাপতি মারিও বেল্লিসসিমো বলেছেন, সরকার হিসেবে গরমিল করে ফেলেছে। কানাডা ইকোনমিক ক্লাশের আওতায় নির্দিষ্ট সংখ্যক ইমিগ্র্যান্ট গ্রহণ করে থাকে। এরমধ্যে ফেডারেল স্কিল্ডড ওয়ার্কাস কর্মসূচীর আওতায় ‘প্রভিনশিয়াল নমিনি’ ও কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাশেও শ্রমিক নিয়ে থাকে। সরকার অপেক্ষার সময় এক বছর বললেও বাস্তবের সাথে তার কোন মিল নেই।