আপনার দ্বৈত নাগরিকত্ব বিদেশে কূটনৈতিক সুরক্ষা পাওয়ার বিষয়টিকে জটিল করে তুলতে পারে

আইনজীবীরা বলছেন, দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলে কানাডার পক্ষে অন্যদেশে হস্তক্ষেপ করা অধিকতর কঠিন হতে পারে

মার্ক গোলোম, জুলাই ২৮, ২০১৪ : সম্প্রতি মিসরীয়-কানাডীয় মোহাম্মদ ফাহমির সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায়ে মিসরের একটি আদালতে অভিযুক্ত হওয়া এবং এর পরই ৭ বছরের কারাদন্ড প্রদানের ঘটনাটি দ্বৈত নাগরিকরা তাদের নিজ দেশে বিপদে পড়লে কী ধরণের সমস্যায় পড়তে পারেন সেটিই স্পষ্ট করে তুলেছে।

কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর শ্যারি এইকেন বলেন, ‘‘বাস্তবতা হলো এই যে, কেউ যখন দ্বৈত নাগরিকত্ব বহন করেন তখন কানাডার জন্য ঘটনার ভেতর হস্তক্ষেপ করা অধিকতর জটিল হয়ে উঠতে পারে।’’ তবে তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা হয় কাজ করতে গিয়ে। আইনে এধরণের কোন কিছু বলা আছে বলে নয়, এটি হলো অপারেশনাল ব্যাপার, নীতিগত বিষয়।’’

কানাডীয় কর্মকর্তারা ফাহমির পরিবারকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, তার দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে তারা কতটা কী করতে পারবেন সে ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে। যদিও সরকার ফাহমির পরিবারকে এই নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, কানাডা ফাহমির জন্য সব ধরণের কন্স্যুলার সেবা দেবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন বেয়ার্ড এপ্রিলে দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইলকে বলেন, যখনই দ্বৈত নাগরিকের বিষয় আসে তখন ‘‘অনেক দেশই নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।’’ তারা ভিন্ন নাগরিকত্বের বিষয়টি মানতেই চায় না। তারা বলে, সে আমাদের নাগরিক।

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এবং মানবাধিকার আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অড্রে ম্যাকলিন বলেন, ‘‘দ্বৈত নাগরিকত্ব বিষয়ে কানাডা সরকারের বক্তব্য হলো এই যে, আপনি যদি দ্বৈত নাগরিক হন এবং যদি ভিন্ন নাগরিকত্বের দেশে ভ্রমণ করতে যান তাহলে কানাডার পক্ষে আপনাকে অর্থবহ কন্স্যুলার সহায়তা এবং কূটনৈতিক সুরক্ষা দেয়া অধিকতর কঠিন হতে পারে।’’

কেন? কারণ অন্য দেশটি বলতে পারে, ‘‘তোমরা সরে যাও। সে আমাদের নাগরিক।’’

যদিও ফাহমি কোন পাসপোর্টে মিসরে ঢুকেছিলেন তা স্পষ্ট নয়। ফাহমি হলেন কায়রোয় নিযুক্ত আল-জাজিরার ভারপ্রাপ্ত ব্যুরো প্রধান। তিনি ও তার সঙ্গী দু’জন সাংবাদিককে মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন জানানোর দায়ে গত ডিসেম্বরে কায়রোতে গ্রেফতার করা হয়। মিসরীয় সরকার মুসলিম ব্রাদারহুডকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে।

তবে এইকেন বলেন, কানাডার যে কোন নাগরিকের বিষয়ে কানাডা সরকার যেভাবে লড়াই করবে দ্বৈত নাগরিকের ক্ষেত্রেও ততটাই দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই করা উচিৎ তা তিনি যে পাসপোর্ট ব্যবহার করেই কোন দেশে ঢুকে থাকুন না কেন অথবা তার যতগুলোই নাগরিকত্ব থাকুক না কেন।

টরন্টোর অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী মাইকেল নিরেন বলেন যে, শুধু কানাডার নাগরিকত্ব থাকলে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিন্ন কোন দেশের সরকার যতটা দৃঢ়তার সঙ্গে বিষয়টির মোকাবিলা করে দ্বৈত নাগরিকের ক্ষেত্রে তার চেয়েও কঠোর ও আগ্রাসী হয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে থাকে।

আপনি যদি বলেন যে আপনি মিসরীয় নাগরিক এবং একইসঙ্গে কানাডারও নাগরিক তাহলে মিসরীয় কর্তৃপক্ষ অধিকতর আগ্রাসী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কারণ সেক্ষেত্রে আপনি মিসরের নাগরিক হিসাবে সেদেশের আইনের প্রতি দায়বদ্ধ।

আন্তর্জাতিক আইন ও দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রশ্ন উত্থাপিত হলে দেখা যাবে কোন কোন দেশ ১৯৩০ সালের হেগ কনভেনশন স্বাক্ষর করেছে। হেগ কনভেনশনে বলা আছে যে, ‘‘কোন দেশ তার কোন নাগরিকের জন্য অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক সুরক্ষা নাও পেতে পারে যদি সেই নাগরিক সংশ্লিষ্ট দেশেরও নাগরিক হয়ে থাকেন।’’

ম্যাকলিন বলেন, ‘‘এই চুক্তিতে সরকারগুলোর জন্য সুরক্ষা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এটি নিছক এমন একটি চুক্তি যাতে বলা হয়েছে যে, আপনি যদি চুক্তি স্বাক্ষর করে থাকেন তাহলে আপনি এধরণের পরিস্থিতিতে বললেন যে সংশ্লিষ্ট নাগরিক যখন আপনার দেশে রয়েছে তখন আপনি তার জন্য কূটনৈতিক সুরক্ষা দিচ্ছেন না।’’

কিন্তু কানাডা ওই চুক্তি স্বাক্ষর করেনি। এদেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব সবসময়ই গ্রহণযোগ্য।

নিরেন বলেন, তবে অন্য অনেক দেশ বিশেষ করে জি-৮ভুক্ত দেশগুলোর বাইরের দেশগুলো দ্বৈত নাগরিকত্ব মানে না। কানাডার নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে হলে অন্য দেশে নাগরিকত্ব বর্জন করার প্রয়োজন নেই। তবে একজন দ্বৈত নাগরিকের নিজ দেশ দ্বৈত নাগরিকত্ব মেনে নেবে কিনা সেটি নির্ভর করে বিভিন্ন দেশের ওপর।

কানাডায় নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীদের মধ্যে অনেকেই তাদের নিজ দেশের নাগরিকত্ব বর্জন করে কারণ সেদেশে তারা আর নাগরিক হিসাবে গণ্য হবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় চীনের কথা। কানাডায় আসা অনেক চীনা নাগরিককে চীনের নাগরিকত্ব বর্জন করতে হয় কারণ চীন দ্বৈত নাগরিকত্ব মানে না।

কানাডা সরকারের একটি ওয়েবসাইটে দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে এমন কানাডীয়দেরকে তার নিজ দেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব বৈধ না হওয়ায় গুরুতর সঙ্কটে পড়তে হতে পারে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়। ওয়েবসাইটে বলা হয়, ‘‘আপনার দ্বিতীয় দেশে সামরিক বা কর আদায় সম্পর্কিত বিষয়ে বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়তে পারেন। আর আপনি কোন দেশের পাসপোর্ট দেখিয়ে তৃতীয় কোন দেশে প্রবেশ করেছেন সে বিষয়ে সংশয় দেখা দিলেও আপনি মারাত্মক সমস্যায় পড়তে পারেন।’’ ওয়েবসাইটে এধরণের নাগরিকদেরকে বিদেশে যাবার আগে কানাডার যথাযথ সরকারী পররাষ্ট্র বিষয়ক দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

কোন কোন দেশ সেদেশের পাসপোর্ট দেখিয়ে সেদেশে যাবার পর বিপদে পড়া দ্বৈত নাগরিকদের ওপর নিজের অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে অধিকতর ন্যায্যতার দাবি করতে পারে।

সেজন্যে কানাডার নাগরিকদের জন্য কানাডার পাসপোর্ট ব্যবহার করাই সবচেয়ে সহজ সমাধান বলে মনে হয়।

ম্যাকলিন বলেন, ‘‘কোন কোন দেশ দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি ধর্তব্যের মধ্যেই নেয় না তবে সেদেশে যাওয়ার সময় তারা সেদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করার ওপর গুরুত্ব দেয়।’’ – সৌজন্যে: সিবিসি নিউজ