নতুন ইমিগ্রেন্টরা কানাডার অর্থনীতির বারটা বাজাচ্ছেন?
খুরশিদ আলম :
ইমিগ্রেন্টরা কানাডার অর্থনীতির বারটা বাজাচ্ছেন। টেক্সপেয়ারদের উপর জগদ্দল পাথর হয়ে বসে আছেন গত তিন দশকের মধ্য আসা নতুন ইমিগ্রেন্টরা। এরা যত না টেক্স দেন তার চেয়ে বেশী সুবিধা গ্রহন করেন। মাথা পিছু এরা বছরে প্রায় ৬ হাজার ডলার করে সরকারী সাহায্য নিচ্ছেন। এতে করে টেক্সপেয়ারদেরকে প্রতি বছর গুনতে হচ্ছে ১৬ থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলার।
ফ্রাসার ইনস্টিটিউট নামে কানাডার একটি রক্ষণশীল গ্র“প সম্প্রতি এমনই এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে আরো বলা হয়েছে, বহুবিধ কারণে নতুন ইমিগ্রেন্টরা অর্থনৈতিকভাবে এদেশে মোটেও সুবিধা করতে পারছেন না যেমনটি পারতেন আগে আসা ইমিগ্রেন্টরা। ভাল বেতনের চাকরী পেতেও তাঁদেরকে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়।
রিপোর্টটি তৈরী করতে সহায়তা করেছেন এমন একজন হলেন হারবার্ট গ্র“বেল। তিনি বলেন, আমরা সকল ইমিগ্রেন্টদের বিরোধী নই। তবে প্রতি বছর প্রায় আড়াই লক্ষ ইমিগ্রেন্টকে কানাডায় প্রবেশ করতে দেয়াটা মোটেও ব্ুিদ্ধমানের কাজ নয়। এটি নিছকই পাগলামী।
ব্যাপারটি কি আসলেই পাগলামী? নাকি নিছকই রক্ষণশীল কানাডিয়ানদের ইমিগ্রেশনবিরোধী প্রপাগান্ডা? হারবার্ট গ্র“বেল বলছেন তাঁরা সকল ইমিগ্রেন্টদের বিরোধী নন। অর্থাৎ কিছু ইমিগ্রেন্ট তাঁরাও চান। তবে কারা সেই ইমিগ্রেন্ট? যারা অতি উচ্চমানের দক্ষতাসম্পন্ন ইমিগ্রেন্ট তাঁদের প্রতিই কি তিনি ইঙ্গিত করেছেন। তিনি কি এমন ইমিগ্রেন্ট চাচ্ছেন যাদেরকে ইংরেজীতে দক্ষ হতে হবে সেক্সপিয়রের মত, বিজ্ঞানে দক্ষ হতে হবে আইনস্টাইনের মত, ম্যানেজমেন্টে দক্ষ হতে হবে ফোর্ডের মত আর কম্পিউটারে দক্ষ হতে হবে স্টিভ জবসের মতো? নাকি এশিয়ান ও আফ্রিকানদের বাদ দিয়ে শুধু ইউরোপীয় ইমিগ্রেন্টদের চান তাঁরা। এটি অবশ্য স্পষ্ট করে বলেননি তিনি ।
কানাডা যদিও গড়েছে ইমিগ্রেন্টরা তবু দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটি সত্যি যে, ইমিগ্রেন্ট বিরোধী মনোভাব এখানকার একটি গোষ্ঠির মধ্যে অতীতেও ছিল এবং এখনো আছে। কানাডার যত বাড়িঘর, রাস্তাঘাট আছে তার ইঞ্জিনিয়ার-কারিগর সবাই ইমিগ্রেন্ট। রেলপথ নির্মান করেছেন ইমিগ্রেন্ট শ্রমিকেরাই। আর সত্যিকার অর্থে কানাডার আদিবাসী বিভিন্ন জনগোষ্ঠি ছাড়া ইমিগ্রেন্ট নয় কে? আজকে তথাকথিত মূলধারার শ্বেতাঙ্গ কানাডিয়ানরা এশিয়ান আফ্রিকান দেশগুলো থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদেরকে ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“পের সদস্য বলে আখ্যায়িত করেন। অথবা বলেন, বাংলাদেশী কানাডিয়ান, ইন্ডিয়ান কানাডিয়ান বা চাইনীজ কানাডিয়ান। অথচ বৃটেন থেকে বা ফ্রান্স থেকে আসা কোন ইমিগ্রেন্টকে ঐভাবে আখ্যায়িত করা হয় না। এর পিছনে সুক্ষ্ম একধরণের রক্ষণশীল মনোভাব সবসময়ই কাজ করছে তথাকথিত ঐ মূলধারার কিছু লোকদের মধ্যে।
তবে আশার কথা এই যে, এই রক্ষণশীল কানাডিয়ানদের সংখ্যা খুব বেশী নয়। এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষনীয় যে, ইমিগ্রেন্ট বিরোধী প্রচার – প্রপাগান্ডার পরও এখনো অধিকাংশ কানাডিয়ানই মনে করেন ইমিগ্রেন্টরা এদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে উল্ল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। সাম্প্রতিককালে পরিচালিত বিভিন্ন জরীপেও দেখা গেছে কানাডার অর্থনীতি উন্নয়নে নতুন আসা বৈধ-অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের রয়েছে অপরিসীম অবদান। এরা পরিশ্রমী, এরা উচ্চ শিক্ষিত, এরা দায়িত্ববান, এরা বিনয়ী। এদের কারোর অবদানকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। কানাডায় বিশেষ একটি গোষ্ঠি ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা কমিয়ে আনার ব্যাপারে তৎপর হলেও সাধারণ জনগন মনে করছেন ইমিগ্রেন্টরা খারপ নয় । তাঁরা দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবাদন রাখছেন। জরীপেই দেখা গেছে শতকরা পচাত্তর ভাগ জনগন মনে করেন ইমিগ্রেন্টারা দেশর জন্য মঙ্গল বয়ে আনছেন। তাহলে ফ্রাসার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা কোথায় পেলে এই তথ্য যে ইমিগ্রেন্টরা কানাডার অর্থনীতির বারটা বাজাচ্ছেন?
তবে ফ্রাসার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা কিছু সত্য কথাও বলেছেন। তাঁদের মতে, নতুন ইমিগ্রেন্টরা অর্থনৈতিকভাবে এদেশে মোটেও সুবিধা করতে পারছেন না যেমনটি পারতেন আগে আসা ইমিগ্রেন্টরা। ভাল বেতনের চাকরী পেতেও তাঁদেরকে প্রচুর সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো, এই পরিস্থিতির জন্য ইমিগ্রেন্টরাই কি ষোলআনা দায়ী? কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এ্যলান গ্রীন ইতিপূর্বে ন্যাশনাল পোস্ট পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, প্রতিবছর লক্ষাধিক উচ্চ শিক্ষিত ও নিজ নিজ পেশায় দক্ষ ইমিগ্রেন্টকে কানাডায় নিয়ে আসা হচ্ছে এই আশার বানী শুনিয়ে যে এখানে তাঁদের ভগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হবে। কিন্তু দেখা যায় তাঁদের সিংহভাগই নিজ নিজ পেশার চাকরী পান না। ফলে কানাডাও তাঁদের কাছ থেকে বিনিমিয়ে কিছু পাচ্ছে না যতটা পবার কথা।
এই ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে আছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অর্থনীতিবিদ,কৃষিবিদ থেকে শুরু করে মীট কাটার পর্যন্ত। আরো আছেন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি। দেখা যাচ্ছে কানাডায় এসে তাঁরা প্রায় সবাই অডজব করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্ট্যাটিসটিকস কানাডা ও সিটিজেনশীপ এন্ড ইমিগ্রেশন কানাডার এক জরীপ রিপোর্ট থেকেও জানা যায় যে কানাডায় নতুন আসা উচ্চশিক্ষিত শতকরা ষাট ভাগ ইমিগ্রেন্টকে অডজব করতে হচ্ছে। নিজ নিজ পেশাভিত্তিক চাকরী না পেয়ে চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। অডজবে পর্যাপ্ত পয়সা আয় করা যায় না। ফলে নানান আর্থিক সমস্যা সংসারে লেগেই থাকে। তখন নিজের ও ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনেকেই হয়ে পড়েন দিশেহারা। অথচ এই সকল অডজব করার জন্য তাঁদেরকে ইমিগ্রেন্ট করে নিয়ে আসা হয়নি। অডজবের জন্য উচ্চ শিক্ষা ও মেধার প্রয়োজন হয় না। যে কোন অল্প শিক্ষিত লোক দিয়েই ঐ কাজগুলো করানো যেতে পারে।
কানাডার চাকরী ক্ষেত্রের এই বৈরী পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরেছেন। এই হতাশার ফলে গত দুই দশকে ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ইমিগ্রেন্টদের একতৃতীয়াংশ কানাডা ছেড়ে চলেও গেছেন। অদূর ভবিষ্যতে এই ছেড়ে যাওয়ার হার আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন।
এই পরিস্থিতিতে বলা যায়, কানাডার রক্ষণশীলদের ইচ্ছাটাই ফলে যাচ্ছে অনেকাংশে। কারণ, ইমিগ্রেন্টদের অনেকে নিজ থেকেই কানাডা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু তাতে কি মূল সমস্যার সমাধান হবে? এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে যাঁরা কানাডায় ইমিগ্রেন্ট হয়ে আসছেন তাঁদের সকলেই যে স্বচ্ছল পরিবারের লোক তা কিন্তু নয়। আর স্বচ্ছল নয় বলেই উন্নত জীবনের আশায় তাঁরা এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে আসছেন পিছনের সকল মায়া-মমতা ও সুখ-দুঃখের স্মৃতিকে পরিত্যাগ করে। সেই সাথে চাকরী বা ব্যবসাকে পরিত্যাগ করে। দেশ পরিবর্তনের এই ধারায় তাঁদেরকে গুনতে হয় বিস্তর অর্থকরীও। কাউকে কাউকে জমিজমা-বাড়িঘরও বিক্রি করতে হয়। অথবা করতে হয় ঋৃণ যা অডজব করে পরিশোধ করা হয়ে উঠে না। যাঁরা জমিজমা-বাড়িঘর বিক্রি করে বা মোটা অংকের টাকা ঋৃণ নিয়ে কানাডায় আসেন নতুন জীবন শুরু করতে তাঁদেরকে যদি অল্পকিছুদিনের মধ্যেই আবার ফিরে যেত হয় তখন অবস্থাটা হয়ে উঠে আরো ভয়াবহ। তবে বেশিরভাগ লোককেই বাধ্য হয়ে থেকে যেতে হয়। কারণ, দেশে গেলে পূর্বের চাকরী ফিরে পাবেন না। ঋৃৃণ করে থাকলে সে ঋৃণ পরিশোধ করা যাবে না। জমিজমা বিক্রি করে থাকলে সেটিও আর ফেরৎ পাওয়া যাবে না। ভাবা যায় কি চরম দুরাবস্থায় নিপতিত হতে হয় যদি কোন ইমিগ্রেন্ট কানাডায় এসে নিজ পেশার একটি চাকরী না পান?
এই যখন পরিস্থিতি তখন কানাডার রক্ষণশীল গোষ্ঠি মনে করছেন এদেশে ইমিগ্রেন্ট গ্রহনের হার অনেক কমিয়ে ফেলা উচিৎ। কিন্তু যাঁরা দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখেন সেই ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও অর্থনীতির পন্ডিতেরা বলছেন কানাডায় ইমিগ্রেন্টের সংখ্যা আরো বাড়ানো উচিৎ। বছরে অন্তত সাড়ে তিন লাখ। যাঁরা ইমিগ্রেন্ট বাড়ানোর পক্ষে ওকালতি করছেন তাঁদের মধ্যে আছেন বিভিন্ন প্রভিন্সের প্রিমিয়ারগণ, রয়েল ব্যাংক, আন্টারিও কোয়ালিশন অব এজেন্সিস সার্ভিং ইমিগ্রেন্টস, কনফারেন্স বোর্ড অব কানাডা (অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান), কানাডা ওয়েস্ট ফাউন্ডেশন (আলবার্টার বুদ্ধিজীবীদের একটি সংগঠন) সহ আরো অনেকে। এদের মতে সাড়ে তিন লাখ ইমিগ্রেন্ট এর সংখ্যাটা হয়তো অনেক বড় অংক মনে হতে পারে। কিন্তু হিসেব করলে দেখা যাবে তা কানাডার মোট জনসংখ্যার মাত্র এক পার্সেন্ট।
অনেকেই বলছেন, কানাডায় মানুষের জন্মহার যেখানে অনেক কম,মাত্র ১.২৩৮% সেখানে ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে বছরে এই এক পার্সেন্ট লোক বৃদ্ধি কানাডার অর্থনীতিতে কোন বিরুপ প্রভাব ফেলবে তেমনটি মনে করার কোন কারণ নেই। বরং অর্থনীতিতে অনুকুল প্রভাবই ফেলবে। এ দলে আছেন কানাডার প্রেইরী অঞ্চলের সিটিজেনশীপ এন্ড ইমিগ্রেশন বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক রবার্ট উইনবার্গ। তিনি বলেন, কানাডায় ইমিগ্রেন্ট গ্রহনের মাত্রা উচুতে রাখাটাই যুক্তিযুক্ত হবে। তাছাড়া এটাও আমাদের চিন্তায় রাখতে হবে যে কানাডায় মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সিনিয়র সিটিজেনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কানাডায় ইমিগ্রেন্ট সংখ্যা বৃদ্ধির পক্ষে আরো যাঁরা ওকালতি করছেন তাঁদের মধ্যে আছেন হিউম্যান রিসোর্স প্রফেশনালস এসোসিয়েশন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিল গ্রিনহালগ। তিনি বলেন, কানাডা বর্তমানে যে হারে ইমিগ্রেন্ট গ্রহন করছে তার চেয়ে আরো বেশী সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট গ্রহন করা উচিৎ। তবে আমাদের দরকার সঠিক বাছাই পদ্ধতি। যে খাতে লোক দরকার নেই সে খাতে লোক এনে অর্থনীতির উন্নয়ন সম্বভ নয়। তাই সঠিক কাজের জন্য সঠিক লোক এনে তাদেরকে আমাদের সমাজে একিভূত করে নিতে হবে।
হিউম্যান রিসোর্স প্রফেশনালস এসোসিয়েশন সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেন্ট ‘ডেলয়ইটি’ এক আশাব্যঞ্জক
চিত্র তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলছেন অর্থনীতির ক্ষেত্রে আগামী ১৫ বছরের মাথায় কানাডা হতে পারে ‘নর্দান টাইগার’ যদি দেশটি আরো বেশী
ইমিগ্রেন্টকে স্বাগত জানায় এবং তাঁদেরকে কানাডার বড় বড় শহর থেকে অন্যত্র যাওয়ার ব্যাপারে টেক্স ইনসেন্টিভসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। তবে এক্ষেত্রেও সঠিক ইমিগ্রেশন বাছাই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এলোপাথারী ভাবে লোক এনে লাভ নেই। আর যদি কানাডা মনে করে যে ভাবে চলছে সেভাবেই চলুক এবং এতে যদি কানাডা খুশি থাকে তবে অদূর ভবিষ্যতের বেহাল অর্থনীতির জন্য প্রস্তুত থাকাই ভাল।
কানাডায় অধিকসংখ্যক ইমিগ্রেন্ট আনতে চায় না বর্তমান রক্ষণশীল ফেডারেল সরকারও। তারা পরিকল্পনা করছে কিভাবে ইমিগ্রেন্ট এর কোটা কমিয়ে এখানকার সামাজিক ও অর্থনৈতক ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। জেসন কেনী ইমিগ্রেশন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকা কালে বলেছিলেন (বর্তমানে এমপ্লয়মেন্ট এন্ড স্যোসাল ডেভলাপমেন্ট মন্ত্রী) কোটা বাড়ানোর আগে আমরা দেখতে চাই ইমিগ্রেন্ট হয়ে আসা বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা কানাডায় অর্থনৈতিকভাবে কতটা স্বচ্ছল হতে পেরেছেন। তিনি আরো জানান, কানাডার ব্যবসায়ীরা চান অধিক সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট। বিভিন্ন প্রভিন্সের প্রিমিয়ারগণও অধিক সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট আনার ব্যপারে ফেডারেল সরকাররে উপর চাপ সৃষ্টি করে আসছেন। কোটা বাড়ানোর ব্যপারে আমাদেরও আপত্তি নেই। কিন্তু তার আগে আমরা দেখতে চাই আয়ের ক্ষেত্রে বর্তমান ইমিগ্রেন্টরা কানাডায় জন্ম নেয়া নাগরিকদের সমান স্তরে পৌঁছাতে পেরেছে কি না। যদি পোঁছাতে পারে তবে কোটা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের কোন আপত্তি নেই।
জেসন কেনীর এই বক্তব্যে যুক্তি আছে কিন্তু বাস্তবতা কতটুকু আছে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কারণ, যারা এদেশে আসেন ইমিগ্রেন্ট হয়ে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি কোনটারই অভাব নেই। কিন্তু তারপরও পেশাভিত্তিক চাকরীর বাজারে তাঁদের প্রবেশাধিকার খুব কৌশলে এবং সুক্ষèভাবে নিয়ন্ত্রিত করা হয়। অথবা নিয়ন্ত্রণ না বলে বলা যেতে পারে বাধার সৃষ্টি করা হয়। নুতন ইমিগ্রেন্টরা কানাডিয়ানদের চাকরীর বাজার দখল করে নিতে পারে এই অলীক ভয়ে তটস্থ থাকেন অনেকেই। ফলে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্য পেশাজীবীদের সামনে তৈরী করা হয়েছে লাইসেন্স ও তথাকথিত ‘কানাডিয়ান অভিজ্ঞাতা’ নামক নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা। স্বল্পউন্নত কোন দেশ থেকে আসা কোন ইমিগ্রেন্টের শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরীর অভিজ্ঞাতা বা কর্ম দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই প্রশ্ন ইমিগ্রেশন দেবার আগে কেন তোলা হয় না? শুধু তাই নয়, উন্নত দেশ থেকে ডিগ্রি ও কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসা ইমিগ্রেন্টদের বেলায়ও আমরা দেখছি একই পরিস্থিতি। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চতর ডিগ্রি ও কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসা অশ্বেতাঙ্গ ইমিগ্রেন্টদেরকেও কানাডায় এসে একই সমস্যায় পড়েতে হয়। পেশাভিত্তিক চাকরী খুঁজতে গেলে বলা হয় কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স নেই। ফলে দেখা গেছে পিজ্জ্বা ডেলিভারীর কাজের জন্য পিএইডি ডিগ্রিধারীর ইন্টারভিউ নিচ্ছেন রেস্টুরেন্টের সুপারভাইজার যে হয়তো কোনরকমে হাইস্কুলের গন্ডি পেরিয়েছেন। তারপরও ডেলিভারির চাকরীটা হয় না। কারণ, এখানেও বলা হয় কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স নেই!
এরকম হাজারো উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। সুতরাং ইমিগ্রেন্টারা কানাডায় জন্ম নেয়া নাগিরকদের সমান আয় করবে এবং তারপরই ইমিগ্রেশন কোটা বাড়ানো হবে, এটি একটি হাস্যকর যুক্তি বা মিথ্যা প্রতিশ্র“তি ছাড়া আর কি হবে পারে?
তবে কেনী ও এখানকার রক্ষণশীল গোষ্ঠির সাথে আমরাও একটি বিষয়ে একমত যে, ইমিগ্রেন্টদের আয় বড়াতে হবে। কারণ দেখা গেছে গত কয়েক দশকে আসা প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রেন্টদের সিংহভাগই চাকরী ক্ষেত্রে নানান প্রতিবন্ধকতার কারণে আয়ের দিক থেকে মোটেও স্বচ্ছলতা অর্জন করতে পারেননি। অধিকাংশ ইমিগ্রেন্টই দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন। অস্বচ্ছল এই ইমিগ্রেন্টদের আয় বাড়াতে হলে ঐ ‘কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স’ নামক উদ্ভট ও উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। তাঁদেরকে সুযোগ দিতে হবে তাঁদের নিজ নিজ পেশাভিত্তিক কাজ করার। কানাডার তথাকথিত মূলধারার নাগরিকেরা ভিন্ গ্রহের কোন উন্নতজাতের এলিয়েন নয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই তাঁরা রক্তমাংসেরই মানুষ। তাঁরা যে কাজ পারবেন অন্যদেশ থেকে আসা লোকেরা তা পারবেন না এই অহঙ্কারী, হাস্যকর ও উদ্দেশ্যমূলক যুক্তি পরিহার করতে হবে। তা না হলে ইমিগ্রেন্টরা যে অবস্থায় আছেন সে অবস্থায়ই থাকবেন।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক, প্রবাসী কন্ঠ